স্বপন কুমার ঢালী, বেতাগী (বরগুনা)
ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লোকাল লঞ্চগুলোতে বিক্রি হচ্ছে নকল ও ভেজাল ওষুধ। ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি বিহীন দেশের খ্যাতিমান ওষুধ কোম্পানীর মোড়ক ব্যাবহার লঞ্চের সহজ সরল মানুষদের প্রতারিত করছে একটি চক্র।
এতে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে লঞ্চের গ্রাম থেকে আসা সাধারণ যাত্রীরা। চিকিৎসকদের মতে, এসব ভেজাল ওষুধ সেবণে মানুষ রোগ থেকে নিরাময় না হয়ে বরং দীর্ঘ মেয়াদী জটিল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বরগুনাগামী লঞ্চগুলোতে ডেকের সাধারণ যাত্রীদের কাছে বিভিন্ন রোগ থেকে ভালো হবে এমন কথা বলে একটি প্রতারকচক্র নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি করছে। সহজ সরল মানুষগুলোর কাছে বাথব্যাথা, কালোজ্বর, হাঁপানী, কাঁশি, বুকে ব্যাথা, মাথাব্যাথা, মহিলাদের ঋতুস্রাবে সমস্যা, তলপেটে ব্যাথা, দাউদ, চুলকানি, গ্যাষ্টিক ও অম্বলসহ নানাধরণের রোগের ওপর বিবরণ দেয়। এরপর বিক্রয় চক্রের তৈরিকৃত ওষুধগুলো বিক্রি করছে। বরগুনার শাহারুখ-১, সুন্দরবন-২, প্রিন্স আওলাদসহ এসব লঞ্চের ডেকে আসনে থাকা উপকূলীয় জনপদের গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ দেদারছে কিনে নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির এই চক্রটি ফার্মেসি থেকে জ্বর, মাথাব্যাথা, গ্যাষ্টিকসহ বিভিন্ন ধরণের ওষুধ কিনে বাড়িতে গিয়ে মোড়ক খুলে অন্য নিজস্ব মোড়কে লাগিয়ে বিক্রি করছে। আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী শাহারুখ-১ লঞ্চে বরগুনার ফুলঝড়ি গ্রামের মামুন (৪৪) নামে একজনকে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসময় কালের কন্ঠ উপজেলা প্রতিনিধি ওষুধ বিক্রেতা মামুনের কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল সরকার অনুমোদিত বৈধ সকল কাগজপত্র আছে কিনা। তিনি তা দেখাতে চায়নি বরং সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কিছু সময়ের জন্য ওষুধ বিক্রি বন্ধ রাখেন। বেতাগী বাসিন্দা লঞ্চের যাত্রী আব্দুল খালেক লাভলু (৫৪) বলেন, বরগুনা রুটে গত ৭ বছর যাবত লঞ্চে নিয়মিত চলাচল করছি। এই মামুনসহ আরো কয়েকজনকে মাঝে মাঝে সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে ভেজাল ও নকল ওষুধ বিক্রি করছে।'
আব্দুল জলিল (৫১) নামে আরেকজন যাত্রী বলেন, সিলেটের প্রস্তুতকারক ফারমেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানী কোম্পানীর ' মিক্স ভিট' নামে একটি ৪৫০ মিলিলিটারে ওষুধের মোড়কে লেখা ৩৫০ টাকা অথচ ওষুধ বিক্রেতা মামুন সেটি বিক্রি করছে মাত্র ১০০ টাকায়। এই নিয়েই মানুষের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
লঞ্চে লঞ্চে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ওষুধ বিক্রেতা অভিযুক্ত মামুন মিয়া অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন,
আমার কাছে কোন ভেজাল ওষুধ নেই। তবে ওষুধ প্রশাসনের অনুমতির সকল কাগজপত্র আছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যায় এবং কিছুক্ষণের ওষুধ বিক্রি থেকে বিরত থাকে।' এবিষয় নিয়ে মুঠো ফোনে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) মেডিসিন বিভাগের ইনডোর মেডিক্যাল কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন,' ভেজাল ও নকল ওষুধ খেলে রোগ নিরাময় তো দুরের কথা, বরং রোগী আরো বেশি রোগান্ত হবে এবং দীর্ঘ মেয়াদী জটিল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে।'
এবিষয় বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন,' নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির কোন সুযোগ নেই। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে এবং তদন্তে সত্যতার প্রমান মিললে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।'