শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০১:০৯ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
প্রশ্নে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি, বাতিল হলো পরীক্ষা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন ফের চালু করলো যুক্তরাষ্ট্র জুলাই শুধু বিপ্লবের না, হান্নান মাসউদের মতো ধান্দাবাজদের কপাল খোলার মাস : নির্ঝর এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ, ভয় দেখানোর জন্য: নাহিদ ইসলাম ভ্রাম্যমান আদালতে দুইজনকে দণ্ড দেওয়ায় থানায় হামলা-ভাঙচুর, পুলিশসহ আহত ২০ বিচারিক আদেশে জামায়াতের পুরনো নিবন্ধনই বহাল, গেজেট প্রকাশ করল ইসি। জাতীয় সমাবেশ সফল করতে বৈঠক ১৯ জুলাই ঐতিহাসিক জাতীয় সমাবেশে অংশ নেওয়ার আহ্বান; গোলাম পরওয়ারের। বিভাগীয় শহরেও হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনে রাজনৈতিক ঐকমত্য : অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বরিশালে যুগান্তর ব্যুরো প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা ; বিএমএসএফের প্রতিবাদ বান্দরবানে সেনাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান: ‘কেএনএফ’-এর শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ দুইজন নিহত। শার্শা সীমান্তে ৭ কোটি টাকার স্বর্ণ ও ভারতীয় পণ্য উদ্ধার, আটক ১২ বিএনপির দফা নয়, অপকর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান ও অ্যাকশন চাই: সারজিস আলম আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের প্রস্তাবে একমত বিএনপি কালীগঞ্জে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেষ্টুনীসহ বৃক্ষ রোপন ও অসহায় নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরন জলবায়ু মোকাবিলা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সুইডেন সহায়তা করছে: পরিবেশ উপদেষ্টা মাত্র দু’বছর পিছিয়েছে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি : পেন্টাগন থাইল্যান্ডে আবারও ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী বদল : নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিতে প্রস্তুত রূপসায় শহীদ ইয়াসিনের করব জিয়ারত করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বীরগঞ্জে বিদায় প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিককে রাজকীয় সংবর্ধনা টেলিকম খাতে নতুন নীতিমালা নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ

ভারতকে রেল ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ কী পাবে?

ডেস্ক রিপোর্টঃ / ১৬১
আপডেটঃ মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪

প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে সম্প্রতি যে দশটি সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে, সেগুলোর একটি হচ্ছে রেল ট্রানজিট।
এটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে রেলযোগে দেশের এক অংশ থেকে আরেক অংশে সরাসরি নিজেদের পণ্য পরিবহনের সুবিধা পাবে ভারত।
সমঝোতা স্মারক হওয়া মানে এই বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে এবং এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে- পরীক্ষামূলকভাবে আগামী জুলাই মাসে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেল চালানো হতে পারে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো থেকে পণ্য ও মালামাল আনার-নেয়ার ক্ষেত্রে বেশ বেগ পেতে হয় ভারতকে। মাঝখানে বাংলাদেশ থাকায় দেশের অন্য অংশের সাথে রাজ্যগুলোর পণ্য পরিবহন বেশ বেশবহুল এবং সময়সাপেক্ষ।
সেই কারণেই বাংলাদেশের কাছে পণ্য ট্রানজিট সুবিধা চেয়ে আসছিল ভারত। কয়েক বছর আগে দু’টি রুটে পণ্য পরিবহনের অনুমতি বা ট্রানজিট দেয় বাংলাদেশ।
তবে ওই চুক্তির আওতায় ভারতের মালবাহী ট্রেন বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সরাসরি যেতে পারে না, বরং বাংলাদেশ সেগুলো ভারতীয় সীমান্তের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পৌঁছে দেয়।
কিন্তু নতুন সমঝোতা চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেলযোগে ভারত এখন সরাসরি নিজেদের পণ্য ও মালামাল পরিবহনের সুবিধা পাবে।
‘এই ট্রানজিট চালু হলে নিজ দেশের মধ্যে রেলপথে দূরত্ব অনেকখানি কমবে ভারতের,’ গত শনিবার সাংবাদিকদের বলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা।
কিন্তু ভারতকে এই ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ কী পাবে?
নতুন চুক্তি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া বাংলাদেশের জন্য একেবারে নতুন কোনো বিষয় নয়। দেশটি আগেও প্রতিবেশী এই রাষ্ট্রকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো ‘অভ্যন্তরীণ নৌ-ট্রানজিট ও বাণিজ্য’ প্রটোকল স্বাক্ষর হয়েছিল বলে জানা যায়।
এরপর স্থলপথে ট্রানজিট সুবিধা পেতে ২০১০ সালে বাংলাদেশের সাথে একটি চুক্তি করে ভারত।
২০১৮ সালে দু’দেশের মধ্যে আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে সড়কপথে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনেরও অনুমতি পায় ভারত।
বর্তমানে পাঁচটি রুটে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে তিনটি যাত্রীবাহী ইন্টারচেঞ্জ, বাকি দুটি পণ্যবাহী।
তবে বর্তমান পদ্ধতিতে ট্রেন সীমান্তে আসার পর বাংলাদেশী ইঞ্জিনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসে।
এরপর বাংলাদেশী চালক তা চালিয়ে আনেন। ফেরার সময়েও একই রকম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
নতুন যে চুক্তিটি হয়েছে, সেটির আওতায় ভারতের মালবাহী ট্রেন পশ্চিমবঙ্গের গেদে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গায় প্রবেশ করবে বলে জানা যাচ্ছে।
এরপর দর্শনা রেল স্টেশন থেকে পাবনার ঈশ্বরদী, নাটোরের আব্দুলপুর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, নীলফামারীর চিলাহাটি হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ী স্টেশনে মালবাহী ট্রেন নিতে চায় ভারত।
সেখান থেকে রেল লাইনটি ভুটান সীমান্তবর্তী ডালগাঁও পর্যন্ত যাবে বলেও জানা যাচ্ছে।
‘ভারত আগে থেকেই এটা চেয়েছিল। এটা কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তারও একটি পরিকল্পনা এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে,’ দুই দেশের সরকার প্রধানের বৈঠক শেষে গত শনিবার সাংবাদিকদের বলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা।
এই ট্রানজিট চালু হলে সেটা উভয় দেশের মানুষের জীবন ও অর্থনীতিতে অবদান রাখবে বলেও জানান কোয়াত্রা।
তবে এই ট্রানজিট চালু করতে নতুন করে রেলপথ নির্মাণ হবে নাকি বর্তমানে যেটি আছে সেটিকে সংস্কার করা হবে, সেটি পরিষ্কার করেননি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও নতুন ট্রানজিট চুক্তি শর্ত, মাশুল, অর্থায়ন কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারাও কথা বলতে রাজি হননি।
বাংলাদেশের লাভ কতটা? ভারতের সাথে বাংলাদেশের নতুন স্বাক্ষরিত ট্রানজিট চুক্তিটির বিষয়ে দু’দেশের সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করায় লাভ-ক্ষতির বিষয়টি এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট হওয়া যাচ্ছে না।
তবে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্য এবং ট্রানজিটের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের লাভের বিষয়ে খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না বিশ্লেষকরা
‘এ যাবৎ যা অভিজ্ঞতা তাতে বলা যায় যে- নতুন এই চুক্তির বিনিময়ে বাংলাদেশ তেমন কিছু পাবে না,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো: তৌহিদ হোসেন।

২০১০ সালে ট্রানজিট চুক্তি সইয়ের পর বাংলাদেশ সরকারেরে পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে- এর মাধ্যমে দেশটি আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবে।
মূলত, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে টন প্রতি হিসেবে একটি ট্রানজিট ফি বা মাশুল দিয়ে থাকে ভারত।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে দেখা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে প্রতি টনে দেশটি মাশুল পায় মাত্র ৩০০ টাকার মতো।
‘অথচ তখন বলা হয়েছিল যে- বছরে প্রায় পাঁচ শ’ মিলিয়ন ডলারের মতো লাভ হবে। কিন্তু পরে আদৌ কী কোনো মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে? তেমন কিছু তো শোনা যায় না,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তৌহিদ।
তবে অতীতে না পারলেও নতুন চুক্তির মাধ্যমে মাশুলের হার বাড়ানোর একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
পরিবহনের সুবিধা পাবে ভারত ‘বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পণ্য আনা-নেয়ার সুযোগের ফলে আগের তুলনায় ভারতের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক কমে আসবে। কাজেই তাদের যত টাকা সাশ্রয় হচ্ছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে একটি বেনিফিট শেয়ারিংয়ের ফর্মুলায় বাংলাদেশ যেতে পারে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন রহমান।
ট্রানজিট পাওয়ার পর দর্শনা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত যে রেল লাইনটি ভারত ব্যবহার করার সুযোগ পাবে, সেটির উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার খরচ তারা দিবে কি-না, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।
‘তবে চুক্তিতে শর্ত রেখে যদি খরচটা ভারতকে দিয়ে বহন করানো যায়, তাহলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। কারণ লাইনটি বাংলাদেশও ব্যবহার করতে পারবে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন রহমান।
নেপাল ও ভুটান যথাক্রমে ১৯৭৬ ও ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের সাথে ট্রানজিট চুক্তি করেছিল। কিন্তু ভারতের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের মালবাহী গাড়ি চলাচল করতে না পারায় সেটি খুব একটা কার্যকর হয়নি।

‘ভারতের কাছ থেকে সেই সুযোগ আদায়ের ক্ষেত্রেও নতুন এই চুক্তিটি একটি বার্গেনিং চিপ হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি? বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সরাসরি ভারতের মালবাহী ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্তটি ভবিষ্যতে দেশটির নিরাপত্তার জন্য কি কোনো ঝুঁকি তৈরি করতে পারে?
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো: তৌহিদ হোসেন বলছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যেসব রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে, সেসব অভিযানে ভারত হয়তো এই রেলপথ ব্যবহার করতে চাইবে।
এসব রাজ্যে অতীতে ভারতীয় নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সংঘাতও হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, চীন-ভারত সীমান্তেও বিভিন্ন সময় সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখা গেছে।
‘এমন সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বা দুঃসময়ে ভারত অবশ্যই এসব ট্রানজিট রুট ব্যবহার করতে চাইবে এবং সেটিই দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন হোসেন।
তবে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির অবশ্য বলছেন, ট্রানজিট দেয়ার পর সেটির উপর বাংলাদেশ কতটুকু নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে, সেটির উপরেই নিরাপত্তা হুমকীর বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করবে।
‘ট্রানজিটে যদি শুধু পণ্য পরিবহনের কথা বলা থাকে, তাহলে সেটি ছাড়া ট্রেনে অন্যকিছু আনা-নেয়া করা হচ্ছে কি-না, সেটি যদি ঠিকমতো না দেখা হয় বা সেটির নিয়ন্ত্রণ যদি বাংলাদেশের হাতে না থাকে, তাহলে তো সমস্যায় হতেই পারে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন কবির।

এদিকে, ভারতে এ ধরনের ট্রানজিট দেয়ার বিষয়টি চীন কিভাবে নেয়, সেটিও উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করবে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এম সাখাওয়াত হোসেন।
‘বাংলাদেশ এতদিন ভারত এবং চীন- উভয়ের সাথেই একটি ব্যালান্স সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে। এখন ভারতকে সরাসরি ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার বিষয়টি চীন যদি ভালোভাবে না নেয়, তাহলে অনেক কিছুই হতে পারে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন হোসেন। সূত্র : বিবিসি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Theme Created By ThemesDealer.Com