প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্কঃ
আমরা অনেকেই শিশুদের মসজিদে নিয়ে যাই। বিশেষ করে জুমার দিনে বাবা, দাদা-নানা ও ভাইয়ের সঙ্গে মসজিদে যেতে শিশুরাও আনন্দ ও আগ্রহ বোধ করে। তাই পাঞ্জাবি-টুপি পরে তারাও বড়দের হাত ধরে নামাজের জন্য মসজিদে চলে আসে। বাংলার ঐতিহ্যের এটি একটি চোখ জুড়ানো দৃশ্য।
অনেক ওলামায়ে কেরামের মতে তাদের মসজিদে নিয়ে আসা অনুচিত। কারণ ছোট্ট শিশুদের কারণে মুসল্লিদের নামাজে সাধারণত বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। কিন্তু শিশুদের সঠিকভাবে নামাজ শেখানো রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই শিশুদের আল্লাহর ঘরের সঙ্গে পরিচয় করানো ও নামাজের জন্য অভ্যস্ততা করানো উচিত। কেননা শিশুকালে যে জিনিসে অভ্যাস হয়, পরে তা করা সহজ হয়, নচেৎ তা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্যই হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমরা তোমাদের বাচ্চাদের সাত বছর বয়স থেকেই নামাজের নির্দেশ দাও। আর যখন ১০ বছর বয়সে উপনীত হবে, তখন তাদের নামাজে অবহেলায় শাস্তি প্রদান করো।(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)
মা-বাবা, শিক্ষক কিংবা অন্য যে কেউ নামাজ পড়ার সময় ছোটদের শিখিয়ে দিতে পারেন। এক হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) ছোটবেলার স্মৃতি বর্ণনা করে বলেন, ‘এক রাতে আমি নবী (সা.)-এর পেছনে বাম পাশে করে নামাজে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তিনি নামাজরত অবস্থায় আমাকে তার হাত দিয়ে টেনে নিজের ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১/২৫৫)
অনেক সময় দেখা যায়, অবুঝ শিশুরা মসজিদে অনাহূত কিছু কাজ করে বসে। চেঁচামেচি, হৈ-হুল্লোড় ও কান্নাকাটি করে। এতে অন্য মুসল্লিদের মনোযোগ ও ইবাদতে সমস্যা তৈরি হয়। মসজিদে মলমূত্রও ত্যাগ করে দিতে পারে। এ কারণে অনেক মুসল্লি বিড়ম্বনার শিকার হন। তাই শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। এই কারণেই রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মসজিদ অবুঝ শিশু ও পাগলদের থেকে দূরে রাখো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৫০)
তাই যদি শিশু (নাবালেগ) একজন হয়, তাহলে তাকে বড়দের কাতারেই একসঙ্গে দাঁড় করাবে। এতে বড়দের নামাজের কোনো অসুবিধা হবে না। আর শিশু একাধিক হলে, প্রাপ্তবয়স্কদের পেছনে আলাদা কাতারে দাঁড় করানো সুন্নাত। তবে হারিয়ে যাওয়া বা দুষ্টুমি করার আশঙ্কা থাকলে, বড়দের কাতারেও দাঁড় করানো যাবে। (আলবাহরুর রায়েক : ১/৬১৮, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৫৭১)
বিভিন্ন জায়গায় শিশুদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়। অথচ এ ধরনের কাজ অনুচিত। এক হাদিসে আবু কাতাদা আল আনসারি (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুল (সা.) তার নাতনী উমামাহকে কাঁধে নিয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। উমামাহ হলো আবুল আস বিন রাবি ইবনে আবদে শামসের ঔরসে রাসুল (সা.)-এর মেয়ে জয়নব (রা.)-এর সন্তান। রাসুল (সা.) সিজদায় যাওয়ার সময় উমামাহকে নামিয়ে রাখতেন এবং উঠে দাঁড়ানোর সময় পুনরায় কাঁধে উঠিয়ে নিতেন। (বুখারি, হাদিস : ১/১০৯)
অন্য একটি বর্ণনায় আরো এসেছে, একদিন সিজদায় থাকা অবস্থায় রাসুলের (সা.) নাতি হাসান ও হোসাইন এসে তাঁর পিঠে চড়ে বসে। কিন্তু তারা নেমে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি নিজে সরাননি। ফলে দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত তিনি সেজদারত থাকেন। নামাজ শেষে তার নিকট দীর্ঘক্ষণ সেজদায় থাকার কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি জবাব দিলেন, ‘আমার নাতিরা আমার পিঠে চড়ে বসেছিলো। আমি তাদের বিরক্ত করতে চাইনি।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১১৪১)
অন্য বর্ণনায় এসেছে- নামাজ শেষ করে তিনি নাতিদের কোলে তুলে নেন। (আবু ইয়ালা মাওসিলির আজ-জাওয়াইদ গ্রন্থে আনাস (রা) এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন। উপর্যুক্ত দুটি সূত্র থেকে একই ধরনের বর্ণনা বুখারী ও মুসলিমেও রয়েছে)
মসজিদে শিশুদের সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর আচরণ এমনই ছিল। মমতা ও ভালোবাসাময় নবী-আদর্শ অনুসরণ উচিত প্রত্যেকের।