প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্কঃ
ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরাসে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২২-এ দাঁড়িয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতদের অধিকাংশই নারী।
প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার সকালে সংবাদ সংস্থা পিটিআই নিহতদের তালিকা প্রকাশ করেছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে।
এক স্বঘোষিত ধর্ম প্রচারক ‘ভোলে বাবা’র ‘সৎসঙ্গ’-এ মঙ্গলবার ওই ঘটনা ঘটে।
বিবিসি-র সংবাদদাতারা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন যে ‘সৎসঙ্গ’ শেষ হওয়ার পরে ওই স্বঘোষিত ধর্মগুরুর স্পর্শ পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন ভক্তরা আর তখনই হুড়োহুড়িতে বহু মানুষ মাটিতে পড়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন একবার যারা পড়ে যান, তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি।
রাতভর হাসপাতালে দাঁড়িয়ে থেকে বিবিসির সংবাদদাতারা দেখতে পেয়েছেন যে বহু মানুষ তাদের নিকটাত্মীয়দের খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
ইটাহ জেলার হাসপাতালে দেখা হয়েছিল এরকমই একজন, উর্মিলা দেবীর সঙ্গে। তিনি তার পুত্রবধূকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন।
যে মণ্ডপে ওই ধর্মীয় জমায়েত হয়েছিল, সেখানে অনেকবার খুঁজে এসেছেন তিনি। তারপরে ১৬ বছর বয়সী পুত্রবধূকে খুঁজতে এসেছিলেন হাসপাতালে।
সৎসঙ্গ হয়েছিল যে বিশাল মণ্ডপে, সেখানে জুতো আর চপ্পলের স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে স্বঘোষিত ধর্ম প্রচারক ‘ভোলে বাবা’র খোঁজেও তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
তার আসল নাম সুরজ পাল জাটভ, তবে নিজেকে ধর্ম প্রচারক হিসাবে তুলে ধরতে তিনি নারায়ন সাকার হরি বলে পরিচয় দিতেন। ভক্তরা তাকে ‘ভোলে বাবা’ এবং ‘বিশ্ব হরি’ বলেও সম্বোধন করেন।
মি. জাটভ একসময়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কনস্টেবল ছিলেন। তিনি নিজে যদিও দাবি করেন যে তিনি একসময়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করতেন, তবে প্রশাসনিক সূত্রগুলি জানিয়েছে যে তিনি রাজ্য পুলিশের স্থানীয় গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
ইটাওয়া জেলার সিনিয়ার পুলিশ সুপার সঞ্জয় কুমার বিবিসিকে জানিয়েছেন ইভটিজিংয়ের অভিযোগে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল মি. জাটভকে। জেলও খেটেছেন তিনি ওই অপরাধে।
জেল থেকে বেরিয়েই মি. জাটভ নিজেকে ধর্ম প্রচারক হিসাবে তুলে ধরতে শুরু করেন।
যে জায়গায় এক ধর্মগুরুর ভাষণ শোনার জন্য অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল, সেটি ইটাহ এবং হাথরাস জেলা দুটির সীমান্তে।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে সিনিয়র পুলিশ সুপার রাজেশ কুমার সিং জানান, "একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, হাথরাস জেলার মুঘলগড়ি গ্রামে ভোলে বাবার অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা হয়েছে।“
জেলার প্রধান মেডিক্যাল অফিসার উমেশ কুমার বলেছেন যে, আহতদের অনেককে ইটাহ-র হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিকান্দ্রারাউ শহরের একটি ট্রমা সেন্টারে।
তিনি জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শতাধিক মানুষ আহত হয়ে ভর্তি আছেন।
মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করে নাম পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
বিবিসির সহযোগী সাংবাদিক ধর্মেন্দ্র চৌধুরী ট্রমা সেন্টার থেকে কিছু ভিডিও পাঠিয়েছেন যেখানে নিহতদের পরিবারগুলিকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
ট্রমা সেন্টারে নিহতদের পরিবারের এক সদস্য বলেন, “এত বড় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে কিন্তু একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এখানে উপস্থিত নেই। ভোলে বাবাকে এখানে এত বড় অনুষ্ঠান করার অনুমতি কে দিয়েছে? প্রশাসন কোথায়?
আহত ও নিহতদের ট্রাক, টেম্পো ও অ্যাম্বুলেন্সে করে ট্রমা সেন্টারে আনা হয়
ভিডিওতে দেখা গেছে, ট্রমা সেন্টারের বাইরে মেঝেতে পড়ে রয়েছে দুইজন নারীর দেহ।
ট্রমা সেন্টারের বাইরে বিশৃঙ্খলা রয়েছে এবং লোকেরা তাদের নিকটাত্মীয়দের সন্ধানে সেখানে আসছেন।
আলিগড় রেঞ্জের পুলিশ আইজি শলভ্ মাথুর সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে ‘ভোলে বাবা’ নামে ওই ধর্মগুরুর অনুষ্ঠানের জন্য অস্থায়ী অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া এক প্রত্যক্ষদর্শীর জানিয়েছেন যে প্রচণ্ড গরমে তাঁবুর মধ্যে অনুষ্ঠান চলছিল। গরমের কারণে পুরো অনুষ্ঠান চলাকালীনই ভক্তদের অস্বস্তিতে কাটাতে হয়েছে। তাই অনুষ্ঠান শেষ হতেই সবাই হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
“সবাই বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিল কিন্তু বের হবার পথ ছিল না। একজন আরেকজনের ওপরে পড়ে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে গেছেন। আমি নিজেও বেরোতে গিয়ে দেখি মোটরসাইকেল রাখার কারণে বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে,” হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন ওই প্রত্যক্ষদর্শী
ভারতের ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠানে আগেও বড় সংখ্যায় মৃত্যুর ঘটনা হয়েছে।
দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য কেরালার এক মন্দিরে নতুন বছরের অনুষ্ঠান চলাকালীন অবৈধ বাজি বিস্ফোরণ হয়ে অন্তত ১১২ জন মারা গিয়েছিলেন। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল ২০১৬ সালের ওই ঘটনায় যে কংক্রিটের ভবন ধসে গিয়েছিল আর মন্দিরটিতেও আগুন ধরে গিয়েছিল।
মধ্যপ্রদেশের একটি মন্দিরের কাছে সেতু ভেঙ্গে পড়ে ১১৫ জন ভক্ত মারা গিয়েছিলেন ২০১৩ সালে। সেদিন ওই সেতুর কাছে প্রায় চার লাখ ভক্ত জড়ো হয়েছিলেন। এরই মধ্যে গুজব ছড়ায় যে সেতুটি ভেঙে পড়তে চলেছে।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় হিন্দু তীর্থস্থান বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে ২০২২ সালে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন অন্তত ১২ জন।