প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্ক:
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনার পর থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)। রাতেই হলগুলো দখলে নেয় আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। হলে পরবর্তীতে হামলা হতে পারে এই আতঙ্কে হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। তবে ছেড়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।
বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল থেকে বিজয় একাত্তর হল, রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হলসহ প্রায় সব হল থেকেই শিক্ষার্থীদের অনেককে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। গতকাল রাত থেকেই পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো হল দখলে নেয় আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। হলে স্থায়ীভাবে রাজনীতি নিষিদ্ধ মর্মে হলের প্রভোস্টের স্বাক্ষর নিচ্ছেন তারা। পরবর্তীতে হলে হামলা হতে পারে বলে শঙ্কা করছেন তারা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সহিংস রূপ নেওয়ায় গতকাল দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে বলে বলা হয়।
ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় দেশের সকল পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজসহ সকল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা দিয়ে নিরাপদ আবাসস্থলে অবস্থানের নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেয়। ঢাবি বন্ধ হবে কিনা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গতরাতে প্রভোস্ট কমিটির জরুরি সভা হয়। আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভা হবে। এরপরই সিদ্ধান্ত জানাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা হল বন্ধ হবে কি না সেটা বুধবার জরুরি সিন্ডিকেট সভার পর বলা যাবে। আপাতত সকলের নিরাপদ সব অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য সকল প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকগণ সার্বক্ষণিক তৎপর থাকবেন।
এখনো ঢাবি বন্ধ ঘোষণা করা না হলেও ইতোমধ্যে আতঙ্কে হল ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল হাবিব নামের নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আন্দোলন শুরুর পর থেকেই বাবা-মা ফোন দিয়ে বারবার খোঁজ নিচ্ছেন। হলগুলো শিক্ষার্থীদের দখলে থাকলে পরবর্তীতে ছাত্রলীগ হামলা করতে পারে এই আতঙ্কে আছি। মারামারি বিষয়টা আমার কাছে খুবই ভয় লাগে। তাই নিরাপত্তার জন্য চলে যাচ্ছি।
শামসুন্নাহার হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, রক্ত দেখলে আমি এমনিতেই ভয় পাই। কিন্তু গত কয়েকদিনের অবস্থায় আতঙ্ক কাটছেই না। ঘুমের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের পেটানোর চিত্র ভেসে উঠছে। আব্বু-আম্মু বারবার কল দিচ্ছেন চলে যাওয়ার জন্য। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্যাম্পাসে ফিরবো।