বেতাগী বরগুনা প্রতিনিধিঃ
বরগুনার বেতাগী উপজেলায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ডিজিটাল জুয়া । এক সময়ে যে লুডু বোর্ড ছিল কাগজের তৈরি, এখন তা মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে পাওয়া যায়। এ মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমেই চলছে জুয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর এলাকা থেকে শুরু করে উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের গড়িয়াবুনিয়া বাজার, ডিসিরহাট বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন বাজার, সদর ইউনিয়নে ঝোপখালী বাজার,বটতলা বাজার আকনবাড়ি খেয়াগঘাট, মোকামিয়া ইউনিয়ন মাদ্রাসা বাজার,হাট মোকামিয়াসহ ৭ টি ইউনিয়েনের প্রায় ৬০/৬৫ টি ছোটবড় গ্রামের বাজারে এই জুয়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে । সহজে প্রচুর টাকা উপার্জনের লোভে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য মানুষ এই জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন। তরুণদের অনেকেই প্রথম প্রথম কৌতূহলবশত এই খেলা শুরুর পরেই নেশায় পড়ে যাচ্ছে। প্রথমে লাভবান হয়ে পরবর্তী সময়ে খোয়াচ্ছে হাজার হাজার টাকা।বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি ও দাম্পত্য কলহ।
মোবাইলে লুডু কিং নামের এ্যাপসসহ বিভিন্ন এ্যাপস ইনস্টল করে সর্বোচ্চ আটজন মিলে এ খেলা খেলতে পারে। খেলার ধরন রয়েছে দুই প্রকার। একটি অনলাইনের মাধ্যমে অপরটি একটি মোবাইলে একইসঙ্গে বসে খেলা যায়। তবে অনলাইন ছাড়া একসঙ্গে চারজনের খেলার প্রবনতা বেশি দেখা গেছে। চারজন মিলে খেললে এক একটি গেইম শেষ হতে সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট। প্রতি গেমে বাজি ধরা হয় ১০০-৫০০ টাকা। কোন কোন ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ আরো বেশিও হয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী জানান, তিনি পেশায় একজন মটর সাইকেল চালক। এক সময় নিয়মিত মোবাইল ফোনে লুডু কিং এ্যাপসের মাধ্যমে জুয়া খেলতেন। খেলতে খেলতে এমন নেশা হয়েছিল যে শেষ পর্যন্ত আয়ের উৎস মটর সাইকেল বিক্রি করে দিতে হয়েছে দেনার কারনে।এক পর্যায়ে তার পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হলে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এখন তিনি বেকার।
কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী জানান, যখন দশম শ্রেণীতে পরি তখন এক বন্ধুর মাধ্যমে লুডু এ্যাপসের সাথে পরিচিত হয়ে এ খেলায় লিপ্ত হই। টিউশনের ফি পরিশোধ না করে সেই টাকা ইনভেস্ট করে প্রথমে ভালই চলছিল।
লোভে পড়ে এই খেলায় মারাত্মক আসক্তি এমন পর্যায় নিয়ে গেছে যে নিজের হাতের স্মার্টফোনটি বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। এমনকি চলতি এসএসসি পরীক্ষার মধ্যেও তিনি খেলা ছাড়তে পারেননি।
এলাকার কয়েকজন অভিভাবকেরা জানান, আমাদের যুবকরা এখন ধ্বংসের পথে। কারন মোবাইল ফোনে এখন কথা হয় না। চলে জুয়া খেলার আড্ডা। আমাদের সন্তানরা লেখা পড়া বাদ দিয়ে বসে মোবাইলে জুয়ার আড্ডায়। তাই এ ধরনের জুয়া বন্ধ করার জন্য জরুরী ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার প্রশাসনের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন
এ ডিজিটাল জুয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ এখন পর্যন্ত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে তবে মোবাইল ব্যাবহারে ক্ষেত্রে অবিভাবকের আরো সচেতন হওয়া উচিত।