প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্ক:
নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ব্যাবস্থা নিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রেজিট্রি ডাকযোগে উক্ত আইনি নোটিশ প্রেরণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান (সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নং ৬২০২) । উক্ত আইনি নোটিশে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব কে বিবাদী করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, জুলাই থেকে ৫ই আগষ্ট ২০২৪ পর্যন্ত সরকারের নির্দেশে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি কর্তৃক বাংলাদেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী প্রায় এক হাজার মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। প্রকৃত পক্ষে হত্যাকাণ্ডের শিকার মানুষের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বহু মানুষের লাশ গুম করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় মাটি-চাপা ও কবর দিয়েছে। আইনি নোটিশে আরও বলা হয়েছে- সারা বিশ্বে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, আগ্রাসন ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ১২৪ টি দেশ এই আদালতের সদস্য। বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর উক্ত আদালতের সনদ তথা রোম সনদে (Rome Statute) স্বাক্ষর করে এবং ২০১০ সালের ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে উক্ত আদালতের এখতিয়ার অনুমোদন ((Ratification) করে। যার দরুন বাংলাদেশের ভূখণ্ডে উক্ত আদালতের এখতিয়ারভুক্ত অপরাধ সংঘটিত হলে উক্ত আদালত সেই অপরাধের বিচার করতে পারে এবং অপরাধীকে শাস্তি দেওয়াসহ সম্পদ জব্দ করতে পারে। এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে জুলাই থেকে ৫ই আগষ্ট ২০২৪ পর্যন্ত সংগঠিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইন তথা রোম সনদের (Rome Statute) অনুচ্ছেদ ৬ (এ) (বি) (সি) এবং অনুচ্ছেদ ৭ (১) (এ) (বি) (ই) (এফ) (এইচ) (আই) লংঘন করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বাংলাদেশে জুলাই থেকে ৫ই আগষ্ট ২০২৪ পর্যন্ত সংগঠিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে পারবে। এক্ষেত্রে রোম সনদের অনুচ্ছেদ ১৪ অনুযায়ী সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশেকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য মামলা উক্ত আদালতে রেফার (Referral) করতে হবে, তাহলেই উক্ত আদালতের প্রসিকিউটরা মামলার আইনি কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
আইনি নোটিশে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশের স্থানীয় আদালতে উক্ত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা সম্ভব নয়। এখানে কিছু বড় ধরণের সমস্যা রয়েছে। প্রথমত সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের অধিকাংশ সদস্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের সরকারের পক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অপরাধীদের বাংলাদেশে ফেরত এনে বিচার করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউশন কর্তৃক ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপক নজীর বা উদাহরণ রয়েছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সরকার পরিবর্তন হলে দেখা যায় রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউশন কর্তৃক অসংখ্য ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়। ফলশ্রুতিতে এই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যদি বাংলাদেশের কোন আদালত বা ট্রাইব্যুনালে করা হয় সেক্ষেত্রে দেখা যাবে ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউশন কর্তৃক রাজনৈতিক বিবেচনায় কোর্ট বা ট্রাইব্যুনাল থেকে উক্ত মামলা প্রত্যাহার করা হতে পারে। সুতরাং এসব বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোন আদালত বা ট্রাইব্যুনালে এই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে যদি উক্ত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যদি নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে করা হয় সেক্ষেত্রে উক্ত আদালত তার আন্তর্জাতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এমনকি প্রয়োজনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সহায়তায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অভিযুক্তদের সেই কোর্টে উপস্থিত করাতে সক্ষম হবে। এছাড়া উক্ত আদালত থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ থাকবে না। এতে আরও বলা হয়েছে- উক্ত আইনি নোটিশ পাওয়ার ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে বাংলাদেশে জুলাই থেকে ৫ই অগাস্ট ২০২৪ এর মধ্যে সংগঠিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই মামলা নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় উক্ত বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করা হবে।