বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস চারা রোপণ চলছেই ইউক্যালিপটাসগাছ পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর দিনাজপুরের বীরগঞ্জের অনেকেরই অজানা। এসব গাছ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে হাটবাজারে ভ্রমমাণ ভ্যানে কি’বা দাঁড়িয়ে এই গাছ অবাধে বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস গাছ এভাবে বিক্রি হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর এ বন বিভাগের নজরদারি নেই। এর ফলে না বুঝেই পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই গাছ কিনছেন ক্রেতারা। জানা যায়, ইউক্যালিপটাস গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ২০০৮ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে এ গাছের চারা উৎপাদন নিষিদ্ধ করে। কিন্তু দ্রুত বর্ধনশীল ও দাম বেশি। পাওয়ার শোতে মানুষ এ গাছ রোপণ করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত যেকোনো সংকট মোকাবেলার অন্যতম উপায় হচ্ছে বৃক্ষরোপণ। পরিবেশ এবং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গাছের কোনো বিকল্প নেই। তাই বলে সব গাছই যে উপকারী অথবা পরিবেশবান্ধব তা কিন্তু নয়, হতে পারে ক্ষতিরও কারণ।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে দামে সহজলভ্য ও ক্ষতিকর দিকসমূহের সচেতনতার অভাবে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ইউক্যালিপটাসগাছ।ক্রমেই বেড়ে চলছে ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস চারা রোপণ। ইউক্যালিপটাসগাছ পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর এই অঞ্চলের মানুষের এখনো অনেকেরই অজানা।ভুক্তভোগী উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের খালপাড়া গ্রামের উত্তম কুমার (৩০) বলেন, ‘ইউক্যালিপটাস শোষণজাতীয় গাছ। এই গাছের বিষাক্ত পাতা ঝরে পড়ে মাটি ও পানি পর্যন্ত কালো হয়ে যায়।ফলে জমিতে ফলন হতে চায় না। বিশেষ করে এই গাছের আশপাশে যদি ফসল থাকে উৎপাদন একেবারেই কমে যায়। জমির ধারে সাত-আটটি গাছ লাগিয়েছিলাম। যখন দেখছি ক্ষতি হচ্ছে পরে গাছ কেটে ফেলেছি।একই ইউনিয়নের কৃষক তমিজ উদ্দিন (৫৫) বলেন, ‘আমিও ক্ষতির শিকার। আমার এক একর কৃষি জমি সংলগ্ন অন্যজনের দুই শতক জমির ওপর ২০-২৫টি ইউক্যালিপটাসগাছ আছে। তার জমিতে বিষাক্ত পাতা ঝরে পড়ে। যার ফলে আমার পাঁচ কাঠা জমিতে ধান হয় এক থেকে দেড় মণ। যেখানে পাঁচ কাঠা জমিতে ধান হওয়ার কথা ছিল সাত থেকে ৯ মণ পর্যন্ত।
উপজেলা সদর পৌরসভার মাকড়াই গ্রামের ইউক্যালিপটাস চারা উৎপাদনকারী হায়দার আলী (২৮) জানান, দুই বিঘা জমি ৭০ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়েছেন। ছয় মাস পর তাঁর উৎপাদিত ৩৫ হাজার গাছের চারা বিক্রির জন্য উপযুক্ত হবে। যার প্রতি পিস পাইকারি বিক্রি মূল্য ১০ থেকে ১২ টাকা। সব চারার বাজারমূল্য আনুমানিক তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার মধ্যে খরচ হয়েছে এক লাখের মতো।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম বলেন,অতিরিক্ত পানি শোষণের কারণে ইউক্যালিপটাসকে পরিবেশের বিরূপ গাছ বলা হয়। এটি পরিবেশের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর। এ গাছের বিষয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে বার্তা না পৌছাতে পারলে লাভ হবে। মানুষের মধ্যে বেশি বেশি করে সচেতনতা বাড়াতে হবে। অন্য গাছের তুলনায় ইউক্যালিপটাস গাছ দ্রুত বড় হয়। আট থেকে ১০ বছরের মধ্যে বিক্রি উপযুক্ত হয়। এ কাঠের চাহিদা বেশি, দামও ভালো পাওয়া যায়। ’ তিনি আরও জানান, আবাদি জমির আইলে ইউক্যালিপটাস রোপণ করায় দিন দিন ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।