লিটন কুমার ঢালী, বেতাগী ( বরগুনা):
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা যার আরেক নাম শারদোৎসব। আর মাত্র কয়দিন বাকি তারপরে পুরোহিতের কন্ঠে চণ্ডীপাঠ থেকে শুরু করে ঢাক, কাঁসর ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনিতে মুখরিত হবে প্রতিটি পূজামন্ডপ। পূজা মন্ডপে মন্ডপে এখন চলছে দেবীদুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার শেষ মুহূর্তের কর্মযজ্ঞ।
আগামী বুধবার (৯ অক্টোবর) দেবীদুর্গার বোধন শেষে ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা আরম্ভ হবে।
মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুযায়ী বসন্তকালে হচ্ছে দেবীদুর্গার পূজার আসল সময়। অন্যদিকে কৃত্তিবাসী রামায়ণ এবং কালিকা পুরাণ,দেবী-ভাগবত পুরাণ ও শাক্ত পুরাণে এটি শারদীয় দুর্গাপূজা বলে উল্লেখ আছে।
কৃত্তিবাসী রামায়ণ এবং কালিকা পুরাণে, শ্রীরামচন্দ্রের শরৎকালে দুর্গাপূজার কথা উল্লেখ আছে। এখানে বলা হয়েছে ব্রহ্মার পরামর্শে শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে দেবীদুর্গার আশীর্বাদ প্রাপ্তির জন্য পূজা করেন। অত্যাচারী-পাপিষ্ট রাবণবধের আগে শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে দেবীদুর্গার পূজা করেছিলেন।
শিবের বর প্রাপ্তিতে রাবণ হয়ে উঠেছিলো অত্যাচারী। হয়ে উঠছিলো পাপিষ্ঠ, নিজেই নিজেকে ঈশ্বর দাবী করেছিলো। তখন তাকে বিনাশ করা অসম্ভব হয়ে পরেছিলো। শ্রীরামচন্দ্র, অত্যাচারী-পাপিষ্ঠ রাবনকে বিনাশ করার লক্ষ্যে দেবীদুর্গার আশীর্বাদের জন্য শরৎকালে পূজা করেন। রাবনকে বিনাশ করার জন্য শ্রীরামচন্দ্র দেবীদুর্গাকে শরৎকালে আবাহন করেন বলে শরৎকালের পূজাকে ‘শারদীয় দুর্গাপূজা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
কৃত্তিবাসী রামায়ণ এবং কালিকা পুরাণে আরো উল্লেখ আছে যে, দেবী দুর্গার পূজার জন্য ১০৮ টি পদ্ম ফুল প্রয়োজন হয়। শ্রীরামচন্দ্র ১০৮ টি পদ্মফুল নিয়ে পূজা শুরু করলে দেবীদুর্গা শ্রীরামচন্দ্রের ‘ভক্তি পরীক্ষা’ করার জন্য দৈব্য শক্তিতে একটি পদ্মফুল লুকিয়ে দেখেছিলেন। পূজা চলাকালীন সময় একটি পদ্মফুল না পেয়ে শ্রীরামচন্দ্র ঐ ফুলের খালি জায়গায় তার একটি চক্ষু দান করতে যাচ্ছিলেন, তখনই দেবীদুর্গা তার সম্মুখে আবির্ভাব হন এবং ভক্তি পরীক্ষায় সন্তুষ্ট হয়ে শ্রীরামচন্দ্রকে আশীর্বাদ করেন। শ্রীরামচন্দ্র দেবীদুর্গার আশীর্বাদ প্রাপ্তি হয়ে অত্যাচারী-পাপিষ্ঠ রাবণকে বধ করে জগতের মঙ্গল, সকলের কল্যাণ বয়ে এনেছিলো।
কৃত্তিবাসী রামায়ণ এবং কালিকা পুরাণের তথ্যানুযায়ী, শ্রীরামচন্দ্র রাবণবধের জন্য অকালে শরৎকালে যুদ্ধজয় করতে দেবীদুর্গাকে পূজা করেছিলেন। তখন থেকে এ পূজার নাম হয় অকালবোধন বা শারদীয় দুর্গাপূজা। আর বসন্তকালে চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষে দেবীদুর্গার পূজাকে ‘বাসন্তী পূজা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।