প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্ক:
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী এসি ও নন এসি বাসের ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা, শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নির্ধারণ এবং তা আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম।এ সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে স্বল্প দূরত্বে অন্য রুটের ভাড়াও যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবি জানানো হয়। নাহলে ৩ দফা দাবি আদায়ে আগামী ১৭ নভেম্বর অর্ধদিবস হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে দাবি না মানা হলে ৯ দিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহবায়ক রফিউর রাব্বি। এ সময় ছিলেন নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, সিপিবি জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, খেলাঘর জেলা কমিটির সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, ন্যাপের আওলাদা হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির হিমাংশু সাহা, গণসংহতি আন্দোলনের তরিকুল সুজন প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে রফিউর রাব্বি বলেন, অতীতে পরিবহন মালিকরা র্যাবের কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, কিভাবে তাদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়েছিল। চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছিলেন প্রতিমাসে শামীম ওসমান ও নাসিম ওসমানকে কীভাবে চাঁদা দেওয়া হয়।তিনি আরও বলেন, যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম গত ৫ আগস্টের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকাসহ সব রুটের ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার এবং ছাত্রদের জন্য অর্ধেক ভাড়া দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়ে আসছিল। সেজন্য আমরা শহীদ মিনারে সমাবেশসহ জেলা প্রশাসক, বিআরটিএ ও পরিবহন মালিকদের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করেছি।
২০২৪ সালের ২ এপ্রিল বিআরটিএর জারি করা নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন রুটের ভাড়ার তালিকা সংবলিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের দূরত্ব সাড়ে ১৯ কিলোমিটার দেখিয়ে (২.৩২ টাকা কিলোমিটার প্রতি) ভাড়া দেখানো হয় ৪৫ টাকা, ফ্লাইওভারের টোল যাত্রী প্রতি ৫ টাকা ও সানারপাড় দিয়ে ইউটার্ন হওয়ায় আরও ৩ টাকা বেশি দেখিয়ে এই রুটের ভাড়া ৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আবার সেই প্রজ্ঞাপনেই বলা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ভাড়া হবে ৫৪ টাকা। বাস্তবিক নেয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা। সে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এই যে বছরের পর বছর সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে ২ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে তা প্রতিকারের জন্য জেলা প্রশাসন বা বিআরটিএ’র কোন উদ্যোগ নেই।
প্রজ্ঞাপনে দেখানো হয়েছে নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল থেকে যাত্রী উঠলে ভাড়া ৪৫ টাকা (ফ্লাইওভার ও ইউটার্ন ছাড়া), চাষাঢ়া থেকে উঠলে ৪২ টাকা, নতুন কোর্ট থেকে উঠলো ৪০ টাকা, শিবু মার্কেট ৩৭ টাকা, জালকুড়ি ৩১ টাকা ইত্যাদি। কিন্তু সব জায়গা থেকেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪৫ টাকা করে। প্রজ্ঞাপনে মতিঝিল শাপলা চত্বর ঘুরে দূরত্ব দেখানো হয়েছে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার।
গত ৩০ আগস্ট সরকার ডিজেলের দাম লিটার প্রতি দেড় টাকা কমালেও ভাড়া কমানোর কোনো উদ্যোগ বিআরটিএ বা প্রশাসন গ্রহণ করেনি। এর প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা (লিংক রোড) রুটে বাস ভাড়া ৪৫ টাকা এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে পাগলা-পোস্তগোলা হয়ে ঢাকা, চিটাগাং রোগ, সোনারগাঁ পঞ্চমীঘাট, পানাম, কোবগা (তাজমহল) রুটের ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে বিআরটিসি’র এসি বাসের ভাড়া ৬০ টাকা এবং এই রুটের বেসরকারু এসি বাসের ভাড়া ৬৫ টাকা করতে হবে।
এসব দাবি আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে কার্যকর না হলে ৯ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ২৯ অক্টোবর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে থেকে পক্ষকাল ব্যাপী লিফলেট বিতরণ, ৩০ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচারণা ও মতবিনিময়, ১ থেকে ৯ নভেম্বর ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষক, নারীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তি, নাগরিক ও সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়, ৯ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল, ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর ঘাট, বাজারে পথ সভা এবং গণসংযোগ, ১৪ নভেম্বর থেকে শহরে মাইকিং, ১৫ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহা সমাবেশ, ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মশাল মিছিল এবং সর্বশেষ ১৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরে সকাল ৬টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত অর্ধ-দিবস সর্বাত্মক হরতালের কর্মসূচি।