প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্ক:
চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও সিনেমা পত্রিকার সম্পাদক ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার (২৬ অক্টোবর)। চলচ্চিত্র ও বিনোদন সাংবাদিকতায় তার অসামান্য অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর এই দিনে ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করে আসছে ফজলুল হক স্মৃতি কমিটি।এ বছর চলচ্চিত্র পরিচালনায় বরেণ্য নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় আলাউদ্দীন মাজিদ পেলেন ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪।শনিবার (২৬ অক্টোবর) চ্যানেল আই স্টুডিওতে আয়োজন করা হয় এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলামের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। ফজলুল হকের কর্মজীবন নিয়ে বক্তব্য রাখেন দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, চলচ্চিত্র প্রযোজক হাবিবুর রহমান খান, প্রকৃতিবন্ধু ও ইমপ্রেস গ্রুপের পরিচালক মুকিত মজুমদার বাবু, প্রয়াত ফজলুল হক ও রাবেয়া খাতুনের কন্যা বিশিষ্ট রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসী, বরেণ্য অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেন, চলচ্চিত্র পরিচালক আবদুল লতিফ বাচ্চু, বাচসাস এর সাবেক সভাপতি আবদুর রহমান, শিশু সাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম, আনন্দ আলো সম্পাদক রেজানুর রহমান, বাচসাস সভাপতি রাজু আলীম, অভিনেত্রী আফসানা মিমিসহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। পুরস্কারপ্রাপ্তির পর গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও আলাউদ্দীন মাজিদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ফজলুল হক স্মৃতি কমিটির প্রতি।
এদিন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘ফজলুল হকের স্মরণে এই সম্মাননা পাওয়া আমার জন্য খুবই সম্মানের। এ দেশে গুণীজনের সম্মান কম তাইতো গুণী ব্যক্তি কম জন্মান। সেই সঙ্গে যথা সময়ে কাজের যথাযথ মূল্যায়ণ দেওয়া হয় না দেশে, যার উত্তম উদাহরণ ফজলুল হক সাহেব। উনি বেঁচে থাকতে আমরা উনাকে উনার কর্ম, পরিকল্পনাকে যথাযথ মূল্যায়ণ করতে পারিনি। তবে এখন আমাদের উচিত তার শিল্পকে, কর্মকে, নতুনত্ব চিন্তাকে সবার সামনে তুলে ধরা। সেক্ষেত্রে পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে আমরা বর্তমান প্রজন্মকে তার সম্পর্কে জানাতে পারি। যার মাধ্যমে তার সকল কর্ম সকল প্রজন্মের কাছে জীবিত থাকবে। এটি আমাদেরই কাজ, আমাদেরই করতে হবে। নয়ত একটা সময় ফজলুল হকের স্মৃতি আমাদের থেকে হারিয়ে যাবে।’
চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক আলাউদ্দীন মাজিদ বলেন, ‘চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন ফজলুল হক সাহেব। সেই পেশার জন্যই ফজলুল হকের নামে এই পুরস্কার পাওয়া খুবই সম্মানের।’ তাই ফজলুল হক তার সহধর্মিনী রাবেয়া খাতুন ও তার পুরো পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আলাউদ্দীন মাজিদ। এদিন প্রয়াত ফজলুল হক ও তার সহধর্মিনী রাবেয়া খাতুনের স্মৃতিচারণ করেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা বিশিষ্ট রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসী। তিনি বাবা মায়ের সঙ্গে কাটানো ছেলেবেলার নানা স্মৃতির কথা স্মরণ করেন। সেই সঙ্গে তার বাবা ফজলুল হক জীবিত থাকা অবস্থায় যে সম্মাননা পাননি তা নিয়েও আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
এছাড়াও প্রকৃতিবন্ধু ও ইমপ্রেস গ্রুপের একজন প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও ফজলুল হক এবং রাবেয়া খাতুনের জামাতা মুকিত মজুমদার বাবুও তার শ্বশুরকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘খুব অল্প বয়স থেকেই আমি ফজলুল হক সাহেবকে চিনতাম। তিনি আসলেই অন্য ধরনের মানুষ ছিলেন, তার চিন্তা ভাবনাও সময়ের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল। তিনি যেমনটা বন্ধসুলভ আচরণ করতেন সব বয়সী মানুষের সঙ্গে, ঠিক তেমনি তার নতুন নতুন চিন্তা ভাবনাও আমাদের আকর্ষণ করতো তার সান্নিধ্যে থাকবার জন্য।’প্রয়াত ফজলুল হক স্মরণে ২০০৪ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রবর্তন করেন ফজলুল হকের সহধর্মিণী বিশিষ্ট কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুন। বিগত ২১ বছর ধরে এই সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে।
এর আগে ‘ফজলুল হক স্মৃতি পদক’ পেয়েছেন- সাইদুল আনাম টুটুল এবং ফজল শাহাবুদ্দিন (২০০৪), চাষী নজরুল ইসলাম ও আহমদ জামান চৌধুরী (২০০৫), হুমায়ূন আহমেদ ও রফিকুজ্জামান (২০০৬), সুভাষ দত্ত ও হীরেন দে (২০০৭), গোলাম রাব্বানী বিপ্লব ও আবদুর রহমান (২০০৮), আমজাদ হোসেন ও সৈয়দ শামসুল হক (২০০৯), মোরশেদুল ইসলাম ও চিন্ময় মুৎসুদ্দী (২০১০), ই আর খান ও অনুপম হায়াৎ (২০১১), নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও গোলাম সারোয়ার (২০১২), রাজ্জাক ও রেজানুর রহমান (২০১৩), সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী ও আরেফিন বাদল (২০১৪), মাসুদ পারভেজ ও শহীদুল হক খান (২০১৫), আজিজুর রহমান ও মোস্তফা জব্বার (২০১৬), আবদুল লতিফ বাচ্চু ও নরেশ ভুঁইয়া (২০১৭), মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও শফিউজ্জামান খান লোদী (২০১৮), কোহিনূর আখতার সুচন্দা ও রাফি হোসেন (২০১৯), আলমগীর ও দীপেন (২০২০), কাজী হায়াত ও মাজহারুল ইসলাম (২০২১), দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ও আবদুল্লাহ জেয়াদ (২০২২) এবং ছটকু আহমেদ এবং ইমরুল শাহেদ (২০২৩)।