প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্ক:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় ভর্তি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠছে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন ৯৪ জন। এ শিক্ষাবর্ষে মেধাতালিকায় ৭৭১তম হয়েও একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেননি। অথচ পোষ্য কোটায় ৭ হাজার ৭০০ এর ওপরের পজিশনে থেকে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরে এ কোটায় ভর্তি হয়েছেন ৪৪২ জন শিক্ষার্থী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতা বলছেন, কোটার বৈষম্যের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেই জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হলো। আর সেই কোটার বৈষম্য নতুন করে আর মেনে নেওয়া হবে না। সেই কোটা বাতিলের জোরালো দাবি তুলছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, স্মারকলিপি, এমনকি আমরণ অনশন করলেও লাভ হয়নি। বহাল রাখছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মেধা তালিকায় ৭৭১ পজিশনেও ভর্তিবঞ্চিত, পোষ্য কোটায় ৭ হাজারেও চান্স
মানববন্ধন, স্মারকলিপি, আমরণ অনশন করার পরও পোষ্য কোটা বহাল থাকছে
কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধেই জুলাই বিপ্লব, সেই কোটা নতুন করে মানা হবে না
ভর্তিসংক্রান্ত তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’ ইউনিটে সর্বশেষ ৭৭০তম মেধাস্থানে থাকা শিক্ষার্থী উর্দু বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। এরপর আর কোনো মেধাতালিকা প্রকাশ না করায় ৭৭১তম মেধাস্থানের শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেননি। কিন্তু পোষ্য কোটায় ৭ হাজার ৭৮৭তম মেধাস্থানধারী শিক্ষার্থী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
এছাড়া পোষ্য কোটায় ৫ হাজার ২৫০ এর ওপরের পজিশনে থেকে আইন বিভাগে ও ৬ হাজার ৫৫০ এর ওপরের পজিশনে পেয়েছে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তির সুযোগ। পাশাপাশি ৭ হাজার ৫৫০ এর ওপরে বাংলা বিভাগে, ৭ হাজার ১৫০ এর ওপরের পজিশনে ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ৬ হাজার ৭০০ এর ওপরে লোকপ্রশাসন, ৬ হাজার ৬৫০ এর ওপরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং ৬ হাজার ৬০০ এর ওপরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছেন পোষ্য কোটাধারীরা।
৫ হাজারের ওপরে পজিশন করেও ৩ ইউনিটের ৩৮ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় শীর্ষস্থানীয় বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে ভর্তি হয়েছেন। এটিকে রীতিমতো চমকে ওঠার মতো তথ্য বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টার সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৯৬ জন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১০০, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ১১৩, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৩৯ ও ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ৯৪ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ গত ৫ বছরে ৪৪২ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।পোষ্য কোটা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, জুলাই বিপ্লবের সূচনা ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়ে। দেশ সংস্কার হলেও পোষ্য কোটার মতো একটা অযৌক্তিক বিষয় নিয়ে তালবাহানা করছে প্রশাসন। তাদের বক্তব্য শুনে আমরা অবাক হয়েছি। তারা বলছে, পোষ্য কোটা ইস্যুটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আরো অনেক ইস্যু আছে।তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি, এটাই আমাদের প্রধান ইস্যু। আজ বিকালের মধ্যে প্রশাসন আমাদের বাতিলের সিদ্ধান্ত না দিলে সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিং করে আন্দোলন কর্মসূচি দেব। পোষ্য কোটার মতো একটা অযৌক্তিক দাবির পক্ষে যারা অবস্থান নেবেন, তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোষ্য কোটায় নির্ধারিত আসনেরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। সর্বশেষ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য প্রতি বিভাগ বা ইনস্টিটিউটে ৪ শতাংশ কোটা চালু রয়েছে। সেই হিসাবে আইন বিভাগে (১১০টি আসন) ৪ জন পোষ্য কোটাধারী শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবেন। তবে চলতি বছরে এ বিভাগে ৭ জনকে ভর্তি করানো হয়েছে।গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে (৪০ আসন) ২ জন শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ থাকলেও ৩ জনকে এবং অর্থনীতি বিভাগে (১০০ আসন) ৪ জনের পরিবর্তে ৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এটি নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটা ৪ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও ভর্তির সুযোগ পান ৭১ জন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে সংরক্ষিত পোষ্য (ওয়ার্ড) কোটা, খেলোয়াড় কোটা এবং বিশেষ বিবেচনায় তাদের এ ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। নির্ধারিত পাসমার্ক না পাওয়ার কারণে পোষ্য কোটার আসন খালি ছিল। ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর ভর্তি উপকমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক, আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সন্তানদের ভর্তির আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাস নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে ৩০ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে ৭১ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পান।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, আমরা উভয়মুখী চাপের মধ্যে আছি। শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি। শিক্ষকরা পোষ্য কোটাকে কোটা বলতে রাজি নন। এটি অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে দেখছেন। তাই উভয়পক্ষকে বুঝিয়ে মাঝামাঝি অবস্থানে আসার চেষ্টা করছি।
পোষ্য কোটা ৪ শতাংশ থাকার পরও এ বছর শুধু আইন বিভাগেই ৭ জন ভর্তি হয়েছেন। কীভাবে এটি সম্ভব হয়েছে জানতে চাইলে উপউপাচার্য বলেন, স্পেসিফিক এক বিভাগ সম্পর্কে তো আর বলতে পারব না। আমার জানা মতে, এ বছর কোটায় সম্ভবত ৭৮ জন ভর্তি হয়েছিল। সেখানে ২ শতাংশও কোটার ব্যবহার হয়নি।