মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৪:০২ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
চাঁদা দাবির অডিও ফাঁস: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২ নেতাকে শোকজ সংসদে গিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছে বিএনপি: ফয়জুল করীম খুলনায় বৈষম্যবিরোধী নেতার পদত্যাগ চলিত মাসেই বাজারে আসছে স্যামসাং-ভিভোর ফোল্ডিং স্মার্টফোন ড. ইউনূসকে ট্রাম্পের চিঠি, বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ জুলাই জেটিতে জামায়াত নেতার ‘খাস কালেকশনের’ নামে অর্থ আদায়, ইউএনওর হস্তক্ষেপে বন্ধ শেখ হাসিনা অপরাধ করেননি, উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন: আইনজীবী আমির হোসেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ ৩ নেতাকে অব্যাহতি দিলেন জি এম কাদের কালীগঞ্জ থানা প্রেস ক্লাবের আয়োজনে কালীগঞ্জের কর্তব্যরত সাংবাদিকদের নিয়ে মৌসুমি ফল উৎসব এবং নৌ-ভ্রমন অনুষ্ঠিত বরগুনার ভূতমারা খাল খদন ও অবৈধ স্থাপনা অপসারণ দাবি এলাকাবাসীর মানববন্ধন পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার অপসারণের দাবিতে খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন দেবহাটা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারন সভায় কমিটির পূর্নগঠন লোহাগড়ায় কুখ্যাত ডাকাত সর্দার গোল্ড হৃদয় গ্রেপ্তার খুবিতে ‘উইক অব ওয়েলকাম’ শুরু: মাদক ও র‌্যাগিংকে না বলার শপথ শিক্ষার্থীদের। খুলনায় ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদে হেফাজতের স্মারকলিপি। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সংঘর্ষ: ৩৩ সাংবাদিকের জামিন মঞ্জুর। সরকারি হাসপাতাল হইতে ভুয়া ডাক্তার আটক। পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার রায়ে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড। ‘জুলাই’ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল কেন, জানালেন আসিফ মাহমুদ

৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে কাগজের কৃত্রিম সংকট!

ডেস্ক রিপোর্টঃ / ৪১
আপডেটঃ রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫

প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্ক:

কাগজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৩৪৫ কোটি টাকা! আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজের মূল্য বাড়েনি। তার পরও চলতি বছর দেশের কাগজের মিল মালিকরা দফায় দফায় বাড়িয়েছেন কাগজের মূল্য। পাঠ্যবই ছাপানোর মৌসুমে গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি টন কাগজের মূল্য বেড়েছে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা। চলতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ৪০ কোটির বেশি পাঠ্যবই ছাপাতে প্রয়োজন ১ লাখ ১৫ হাজার টন কাগজ। সে হিসাবে কাগজ মিলের মালিকরা ঐ বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।আবার বেশি দাম দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী কাগজ পাচ্ছে না পাঠ্যবই ছাপানোর দায়িত্বে থাকা দেশের ১১৬ ছাপাখানা। কাগজ সংকটের কারণে অধিকাংশ ছাপাখানা গত এক মাস ধরে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে বই ছাপানো বন্ধ রাখছে। কাগজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পেছনে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র থাকতে পারে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কাগজের মিল মালিকদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে সরকারকে এখনই কাগজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়ে ১০টি ছাপাখানার মালিক ইত্তেফাককে বলেন, দ্রুত এ সিন্ডিকেট দমন করে বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানি করা না হলে এ বছর শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার সময় আরও দীর্ঘ হবে। কোটি কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিঘ্ন ঘটবে। জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে পাঠ্যবই ছাপানোর প্রতি টন কাগজের মূল্য ছিল ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। বর্তমানে তা নেওয়া হচ্ছে ১ লাখ ৩৫ হাজার থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কাগজের বাজার স্বাভাবিক করতে সরকারকে বারবার তাগিদ দিয়েছেন ছাপাখানার মালিকরা। বেশি দাম দিয়েও এত কাগজ কিনতে পারছেন না তারা। ফলে পাঠ্যবই ছাপার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

গত ১ জানুয়ারি শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও  মাধ্যমিকে এবার মোট শিক্ষার্থী ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার ২৮৩ জন। ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২টি বই ছাপানো হচ্ছে। প্রাথমিকের ২ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫ কপি বই। গতকাল পর্যন্ত ছাড়পত্র (প্রাক-সরবরাহ পরিদর্শন বা পিডিআই) হয়েছে ৬ কোটির বেশি বই। অর্থাৎ ৬৫ শতাংশের বেশি পাঠ্যবই সরবরাহ করা হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের ২ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই। গতকাল পর্যন্ত মাধ্যমিকের ৬ কোটি ২৫ লাখের বেশি পাঠ্যবইয়ের ছাড়পত্র বা সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে ৮ হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আশা করছে, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। তবে ছাপাখানার মালিকরা বলেন, গত এক মাস ধরে কাগজের সংকট থাকায় আগামী এপ্রিল মাসের আগে সব বই ছাপানোর কাজ শেষ হওয়ার সুযোগ কম।

এদিকে পাঠ্যবই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে। ফলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমেছে। শিক্ষকদের বই ডাউনলোড করে পড়াতে বলা হলেও শিক্ষার্থীদের হাতে কপি না থাকায় তাতে কারো আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না। এতে স্কুলগুলোতে হচ্ছে মাত্র দুই-একটি ক্লাস। আর অনেক স্কুল যারা ‘সিটি’ পরীক্ষা বা মাসিক পরীক্ষা নেয়, তারা বই দিতে না পারলেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে দিচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের অন্য কোনো উপায় না পেয়ে যেতে হচ্ছে কোচিং-প্রাইভেট শিক্ষকদের কাছে। রাজধানীর কোচিং সেন্টারগুলোতে ভিড় লেগে গেছে। আর্থিক সংকটের কারণে যাদের পক্ষে কোচিং করা কিংবা প্রাইভেট পড়া সম্ভব না, তারা পড়েছেন বিপদে। অভিভাবকরা বলেন, রাজধানীতে একজন শিক্ষকের কাছে কোচিংয়ের ব্যাচে পড়ালেও দিতে হয় আড়াই হাজার টাকা। সেই হিসেবে কমপক্ষে তিন জন শিক্ষকের কাছে পড়াতে সাড়ে ৭ হাজার টাকা প্রতি মাসে দিতে হবে।

রাজধানীর পাঁচটি স্কুলে সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনো বিদ্যালয়েই সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব নতুন বই পায়নি। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বই পেয়েছে। কিন্তু চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অধিকাংশ বিষয়ের বই এখনো পায়নি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের কেউ কেউ ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে পড়াচ্ছেন। কোথাও পড়ানো হচ্ছে পুরোনো বই। কোনো কোনো শিক্ষক পড়াচ্ছেন অভিজ্ঞতা থেকে। কোনো কোনো বিদ্যালয় বইয়ের পড়াশোনার বাইরে মৌলিক বিষয়গুলো শেখাচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থীও পিডিএফ ডাউনলোড করছে।

সম্প্রতি শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যবই হাতে পাবে। আমরা (বই ছাপা) কার্যক্রম শুরু করেছি দেরিতে। আমাদের বই পরিমার্জন করতে হয়েছে। বইয়ের সিলেবাস, কারিকুলাম নতুন করে করতে হয়েছে। বইয়ের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এতে তো দেরি হবেই। আগের সরকারের আমলে মার্চের আগে পুরোপুরি বই দেওয়া হয়নি।’

বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির একজন নেতা বলেন, ‘মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি থেকে আমাদের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বই ছাপানোর কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ৪০ কোটির বেশি বই ছাপাতে কাগজ লাগবে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টন। এ বছর কাগজের পুরুত্ব ৮০ এবং উজ্জ্বলতা ৮৫ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বার্স্টিং ফ্যাক্টর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ১৬। এই মানের কাগজ উৎপাদনের সক্ষমতা দেশের মাত্র ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী তারা কাগজ সরবরাহ করতে পারছে না। দামও বাড়ানো হয়েছে। আবার একশ্রেণির কাগজ ব্যবসায়ী ছাপাখানার মালিকের ফোন রিসিভ করছেন না। তৃতীয় পক্ষ থেকে কাগজ নিতে আরও বেশি টাকা দেওয়া লাগছে। কাগজ সংকট না থাকলে ছাপাখানাগুলোর দিনে ৪০ লাখ কপি বই ছাপানোর সক্ষমতা রয়েছে। গত এক মাস ধরে কাগজের সংকট রয়েছে।’

এনসিটিবির কর্মকর্তারা ইত্তেফাককে বলেন, দ্রুত বই দেওয়ার জন্য তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা আশা করছেন, এ মাসের মধ্যে প্রাথমিকের এবং দশম শ্রেণির সব বই দিতে পারবেন। আর ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বইও আগামী মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে দেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, এনসিটিবি সবচেয়ে বেশি অনভিজ্ঞতা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে ছাপার কাগজ নিয়ে। চাহিদা মতো ৪০ কোটি বই ছাপাতে কত হাজার টন কাগজ প্রয়োজন এবং দেশে কাগজের এই সক্ষমতা আছে কি না, সেটা তারা বিবেচনায় নেয়নি। বিগত সরকার দেশি মিলগুলোকে সুবিধা দিতে গিয়ে কাগজের আমদানির ওপর ৫৯ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছে। সেটির সুযোগ নিচ্ছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। ছাপাখানার মালিকরা বলেন, কাগজের মূল্য যেভাবে বাড়ানো হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। ৫৯ ভাগ শুল্ক দিয়ে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি করলেও দেশের বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে কম পড়বে। তবে এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

কাগজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে আম্বার পেপার মিলস লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ‘ফ্রেশ বাংলা’সহ আরও পাঁচটি পেপার মিলের মালিককে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউই ফোন ধরেননি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Theme Created By ThemesDealer.Com