মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
জেটিতে জামায়াত নেতার ‘খাস কালেকশনের’ নামে অর্থ আদায়, ইউএনওর হস্তক্ষেপে বন্ধ শেখ হাসিনা অপরাধ করেননি, উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন: আইনজীবী আমির হোসেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ ৩ নেতাকে অব্যাহতি দিলেন জি এম কাদের কালীগঞ্জ থানা প্রেস ক্লাবের আয়োজনে কালীগঞ্জের কর্তব্যরত সাংবাদিকদের নিয়ে মৌসুমি ফল উৎসব এবং নৌ-ভ্রমন অনুষ্ঠিত বরগুনার ভূতমারা খাল খদন ও অবৈধ স্থাপনা অপসারণ দাবি এলাকাবাসীর মানববন্ধন পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার অপসারণের দাবিতে খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন দেবহাটা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারন সভায় কমিটির পূর্নগঠন লোহাগড়ায় কুখ্যাত ডাকাত সর্দার গোল্ড হৃদয় গ্রেপ্তার খুবিতে ‘উইক অব ওয়েলকাম’ শুরু: মাদক ও র‌্যাগিংকে না বলার শপথ শিক্ষার্থীদের। খুলনায় ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদে হেফাজতের স্মারকলিপি। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সংঘর্ষ: ৩৩ সাংবাদিকের জামিন মঞ্জুর। সরকারি হাসপাতাল হইতে ভুয়া ডাক্তার আটক। পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার রায়ে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড। ‘জুলাই’ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল কেন, জানালেন আসিফ মাহমুদ রেস্ট হাউসে নারীকাণ্ডের সেই ওসি প্রত্যাহার চাকরির ইন্টারভিউতে ভালো করবেন যেভাবে মনে আছে তো, কারেন্টের খাম্বা কেস: ফয়জুল করিম জুলাইয়ে ‘প্রোফাইল লাল’ করার পেছনে ছিলেন শিবির নেতা ফরহাদ জামায়াত আমীরের সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদলের সৌজন্য সাক্ষাৎ। আশুরা উপলক্ষে খুলনায় শিয়া সম্প্রদায়ের সাথে কেএমপির মতবিনিময় সভা: নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত পুলিশ প্রশাসন।

বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ঐক্য এবং সাম্প্রতিক দৃশ্যপট

ডেস্ক রিপোর্টঃ / ২৪
আপডেটঃ শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫

প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশের সামরিক শক্তি ও কাঠামো নিয়ে এ দেশের জনগণ চিরকাল গর্বিত। জনগণ সব সময়ই তাদের সোনালি সন্তানদের প্রতি সমর্থন দিয়ে এসেছে। এটাই তো সত্য, জাতীয় যে কোনো প্রয়োজনে আমাদের সামরিক বাহিনীই এগিয়ে আসে এবং জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সাহসিকতার সঙ্গে ভূমিকা পালন করেছে।গত বছর আগস্ট মাসে, যখন সারা দেশ ভয়াবহ এক গৃহযুদ্ধের ঝুঁকিতে, তখন আবারও আমরা সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের দৃঢ় অবস্থান চাক্ষুষ করি। সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা দেশকে রক্তক্ষয়ী বিপদ থেকে রক্ষা করেন। সত্যি বলতে, রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পূর্ণ সুযোগ পেয়েও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সে পথে হাঁটেননি। তিনি দেশের জনগণের প্রতি অবিচল সমর্থন রেখে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। সে সময়ে তিনি শপথ নিয়েছিলেন, ‘যা-ই ঘটুক না কেন, দেশের প্রতি তার শপথ এবং আনুগত্য বজায় রাখবেন। ফলাফলরূপে তিনি জনগণের দাবির সঙ্গে থেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সব সুযোগ সম্পন্ন হওয়া এবং এই বছরই নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবেন বলে সামরিক বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন।

এটাই তো সত্য, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের শুরুর দিকে, জেনারেল ওয়াকার ও তার বাহিনী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্রদের নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলন চলাকালীন বিক্ষোভরত জনগণের দিকে গুলি চালানো থেকে নিজেদের বিরত রাখেন। এর ফলে ১৫ বছরের শাসনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ৫ মার্চ, ইউএন হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস, ফলকার টার্ক, একটি সাক্ষাৎকারে বিবিসির ‘হার্ডটক’-এ বলেছিলেন যে, জাতিসংঘ বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে স্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়েছিল যে, জনতার প্রতিবাদ দমনে সামরিক বাহিনীর অংশ নিলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের অংশগ্রহণ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

টার্ক আরও বলেছিলেন, ‘আমরা আসলে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে, যদি তারা জড়িত হয়, তবে তারা আর শান্তি মিশনে ট্রপস পাঠাতে পারবে না।’ টার্কের মতে, ‘ফলস্বরূপ, আমরা দেখেছি ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।’

কিন্তু সত্যটা এমন নয়। সময়ের রেকর্ড খতিয়ে দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায়, ৩ আগস্টই সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার ঘোষণা করেছিলেন, ‘আর কোনো গুলি নয়, কারণ ছাত্রদের প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে।’ ওদিকে ইউএন হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটসের মতে, তিনি ৪-৫ আগস্ট রাতে এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছিলেন। সুতরাং ভলকার তুর্কের দাবি সঠিক নয় যে, সেনাবাহিনী তার ফোন কলের প্রতিক্রিয়াতেই শুধু জনগণের বুকে গুলি চালানো বন্ধ করেছে।

কোনো সন্দেহ নেই, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জাতীয় স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং এমন নয় যে তারা বাহ্যিক চাপের দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মিশনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ব্যক্তিগত লাভের জন্য কখনোই কাজ করে না। এখানে বাংলাদেশ সরকারের জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ থেকে অর্থনৈতিক লাভও উল্লেখযোগ্য, কারণ জাতিসংঘ বাংলাদেশকে এই অংশগ্রহণের জন্য একটি বড় অঙ্কের অর্থ ফেরত দেয়। অতএব, জাতিসংঘ মিশনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

সামরিক বাহিনীর এমন সব পেশাদারি পদক্ষেপের পরও, দেখা যায়, বর্তমানে বিদেশে বসবাসরত ভুল পথ অনুসরণকারী ও অনিয়ন্ত্রিত কিছু অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা নিরবচ্ছিন্নভাবে আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে অস্থিতিশীল করার জন্য অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তথ্য যাচাই সাপেক্ষে দেখা যায়, ঐ কর্মকর্তারা নানা মোহে পড়ে বিভিন্ন সংস্থার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তাছাড়া, বিদেশে অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপনকারী কয়েক জন কুখ্যাত ব্যক্তিও ইউটিউবের মাধ্যমে বারবার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ছড়িয়ে সামরিক বাহিনীর মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। তাদের কর্মকাণ্ড স্পষ্টভাবেই দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছু নয়।

এই অযাচিত চেষ্টাগুলোর পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশের কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীও বাংলাদেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। আশ্চর্যজনকভাবে, ভারতের কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন মিডিয়া, যেমন ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ এবং ‘ইন্ডিয়া টুডে’ নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কার্যক্রমে কালিমা লেপন ও বিভাজন সৃষ্টি করতে সচেষ্ট। তারা চাইছে ক্যান্টনমেন্টগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হোক। কিন্তু কেন?

‘সামরিক বাহিনীর কমান্ডে অস্থিতিশীলতা চলছে।’-এই মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে, ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) ১১ মার্চ ২০২৫ একটি নোট প্রকাশ করেছে, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে, কিছু ভারতীয় মিডিয়া আউটলেট, যেমন ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ এবং ‘ইন্ডিয়া টুডে’ বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কমান্ড চেইনে বিপর্যয় এবং অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা-সম্পর্কিত মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এটি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও সশস্ত্র বাহিনীর সম্মানকে ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে একটি উদ্দেশ্যমূলক তথ্যগত প্রচারণার অংশ বলে প্রতীয়মান।’

‘আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছি যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ এবং প্রধান সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে তার সাংবিধানিক কর্তব্য পালনে পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কমান্ড চেইন দৃঢ় এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব সদস্য, শীর্ষ জেনারেলসহ, সাংবিধানিক কর্তব্য, কমান্ড চেইন এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাদের আনুগত্যে অবিচল। বাহিনীর মধ্যে অসহযোগিতা বা অবিশ্বাসের যে কোনো অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন এবং ক্ষতিকর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং নিরাপত্তা রক্ষার জন্য তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছে।’

সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ৫ আগস্ট এবং তার পরেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছেন। এটাই কি তার অপরাধ? তিনি বাংলাদেশকে সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ থেকে রক্ষা করেছেন। এটাও কি তার অপরাধ? চাপ সত্ত্বেও, তিনি সামরিক শাসন আরোপ করেননি। এটাও কি তার অপরাধ?

তার জীবনী সম্পর্কে বিবিসি ওয়ার্ল্ডের রিপোর্টে লিখেছে, ‘ওয়াকার বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং কিংস কলেজ, লন্ডন থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে মাস্টার অব আর্টস ডিগ্রি লাভ করেছেন, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান হওয়ার আগে, তিনি প্রায় ছয় মাসের জন্য চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন, যেখানে তিনি সামরিক কার্যক্রম এবং গোয়েন্দা সংক্রান্ত কাজ, বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ এবং বাজেট দেখাশোনা করেছিলেন।’

এসব বলা এ কারণে, এই সময়ে পুরো দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকাশচুম্বী, নারীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে এবং সার্বিকভাবে পুলিশের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় নানা মাত্রিক নিরাপত্তাও নাজুক। এমন পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে বিভিন্ন ধারার অরাজকতা চলছে। দেখা যাচ্ছে, পুলিশ বিভাগের দুর্বল উপস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের জনগণের জন্য একমাত্র আশার আলো সামরিক বাহিনী এবং জনগণের জন্য সাহসের একমাত্র উৎস হচ্ছে সামরিক বাহিনীর মধ্যে অবিচল ঐক্য।

কিছু অপশক্তি গুজবকে পুঁজি করে সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা ঘটাতে চায় এবং সামরিক বাহিনী এবং সরকারের মধ্যে দূরত্ব বাড়াতে চায়। কারণ, সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খলা ও একতা ভাঙতে পারলে দেশের নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থে বিপর্যয় ঘটবে, যা স্বার্থান্বেষী মহল তাদের নিজেদের ফায়দার জন্য কাজে লাগতে পারবে। তাই দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে, আমাদের দায়িত্ব হলো এই ধরনের মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকা এবং সামরিক বাহিনীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করা। তাহলেই বর্তমান সরকারের প্রতি সামরিক বাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।

লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Theme Created By ThemesDealer.Com