লিটন কুমার ঢালী, স্টাফ রিপোর্টার:
বরগুনার তালতলীতে ১০ মাস বয়সী শিশু জুবায়েরের মৃত্যু যেন আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কতটা অব্যবস্থা আর অবহেলা জমে আছে।
ছবির ভেতর দেখা যায় নিথর দেহে শুয়ে থাকা শিশু, পাশে দাঁড়িয়ে বাবার ভাঙা বুক আর আশপাশে আতঙ্কিত জনতা। এটি কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়, বরং বাস্তব এক ট্র্যাজেডি।
শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জুবায়ের হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা সিপিআর, অক্সিজেন, স্যালাইনসহ সব ধরনের চেষ্টা চালিয়েছেন প্রাণ ফেরাতে। কিন্তু সমস্যা ছিল অন্যখানে—একটি অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি।
তালতলীতে একটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও, দীর্ঘদিন ধরে চালক না থাকায় সেটি পড়ে আছে অচল অবস্থায়। জরুরি ভিত্তিতে বরিশাল বা পটুয়াখালী নেওয়ার দরকার ছিল জুবায়েরকে। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যায় একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রওনা হলেও পথেই নিভে যায় শিশুটির জীবনপ্রদীপ।
শিশুটির বাবা মো. ছগির মিয়ার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,
“সরকারের দেওয়া গাড়ি ধূলা খায়, আর আমার ছেলেটা মাটি খায়। আমি কিছুই করতে পারিনি।
তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মনিরুল ইসলাম জানান,
"চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, কিন্তু চালকের অভাবে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার সম্ভব হয়নি। বিষয়টি বারবার উর্ধ্বতন দপ্তরে জানানো হলেও সমাধান হয়নি।
এই ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা দেখা গেছে। তারা বলছেন শুধু ডাক্তার নয়, দরকার সময়মতো সেবা। অ্যাম্বুলেন্স না থাকলে অক্সিজেন বা সিপিআর দিয়ে কতটা বাঁচানো সম্ভব?
তালতলীর সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—এই মৃত্যু কি শুধুই জুবায়েরের অসুস্থতার ফল? নাকি রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনারও এক নির্মম দায়ভার? আমরা চাই জবাব, চাই কার্যকর ব্যবস্থা। আর যেন কোনো পিতা এভাবে সন্তান হারিয়ে না বলে, আমি কিছুই করতে পারিনি।