লিটন কুমার ঢালী, স্টাফ রিপোর্টার:
বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ফুলঝুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজ ঘটেছে এক অনন্য ও আবেগঘন দৃশ্য, যা শিক্ষাঙ্গনের সাধারণ দিনের ছকে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হয়ে উঠেছে। এক নিঃশব্দ চমক ও হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা আবেগে মুখর হয়ে ওঠে বিদ্যালয়ের পরিবেশ, যখন বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে বরগুনা পিটিআই-এর ইনস্ট্রাক্টর নুসরাত আরা বীথি হঠাৎ আবিষ্কার করেন, এই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা ফাহমিদা নুসরাত সুমী আসলে তাঁর শৈশবের প্রিয় বান্ধবী।
সকালের সাধারণ এক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরগুনা পিটিআই-এর সুপারিন্টেন্ডেন্ট দিলারা সুলতানা ও ইনস্ট্রাক্টর নুসরাত আরা বীথি ফুলঝুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন। বিদ্যালয়ের পরিবেশ, পাঠদান পদ্ধতি ও সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের সময় হঠাৎ করেই ইনস্ট্রাক্টর বীথি ও শিক্ষিকা সুমীর চোখাচোখি হয়। প্রথমে কিছুটা দ্বিধা ও বিস্ময়ের আবরণে ঢাকা থাকলেও মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে সেই দেয়াল—দুই বান্ধবী চেনা কণ্ঠ, চেনা হাসি আর পুরনো দিনের স্মৃতিতে আবিষ্ট হয়ে পড়েন।
তাদের এই আকস্মিক ও হৃদয়ছোঁয়া পুনর্মিলনের দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে যান বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অনেকেই চোখের কোণে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। বন্ধুত্বের এমন স্নিগ্ধ প্রকাশ, যা দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান পেরিয়ে এসে আবার নতুন করে প্রাণ পায়, তা প্রত্যক্ষ করে সকলে অনুধাবন করেন সম্পর্কের গভীরতা ও সময়ের গহীনতাকে।
এমন এক ঘটনা শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের পুনর্মিলন নয়, বরং শিক্ষাঙ্গনের মানবিক দিককে নতুনভাবে সামনে তুলে আনে। যান্ত্রিক জীবনের নিয়মতান্ত্রিকতা পেরিয়ে এমন মুহূর্ত মনে করিয়ে দেয়, পেশা যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, সম্পর্ক, অনুভূতি আর ভালোবাসার জায়গাটি বরাবরই অমূল্য।
বন্ধুত্বের শক্তি, যা সময়ের পর্দায় হারিয়ে গিয়েও থেকে যায় মনে, তা-ই আজ আবারও নতুনভাবে ফিরে এল ফুলঝুরির স্কুল মাঠে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, সম্পর্কের বন্ধন কখনো ছিন্ন হয় না—ঠিক সময়ে, ঠিক জায়গায়, তা আবার ফিরে আসে হৃদয়ের দোলায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মাহাতাব হোসেন বলেন, “আজকের দিনটি আমাদের বিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। একজন শিক্ষিকা তাঁর সহপাঠিনীকে একজন প্রশিক্ষক হিসেবে ফিরে পেয়ে যেমন গর্বিত হয়েছেন, তেমনি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি একটি জীবন্ত গল্প, যেখানে পেশাগত জীবন ও ব্যক্তিগত আবেগ এক অপূর্ব ছন্দে মিলেমিশে গেছে।”