মো: আল মাসুম খান,
খুলনা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে একমাত্র উন্মুক্ত পার্ক জাতিসংঘ শিশু পার্ক ইজারা নিতে পৃথক ভাবে আবেদন করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের খুলনার স্থানীয় নেতা-কর্মী, ছাত্র প্রতিনিধি ও এনজিও। তারা সবাই আগামী ঈদুল আযহা উপলক্ষে জাতিসংঘ পার্কে মেলা বসাতে চান। উল্লেখ্য এর মধ্যে একটি কোম্পানি ৭ বছরের জন্য পার্কটি ইজারা চেয়েছেন। খুলনা মহানগরীতে শিশুদের বিনোদনের একমাত্র পার্কটি ঘিরে বাণিজ্যিক তৎপরতায় উদ্বিগ্ন খুলনার সকল স্তরের নাগরিক নেতারা। নাগরিক নেতাদের ও সাধারণ জনগণের ভাষ্য, খুলনা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে শিশুদের জন্য উন্মুক্ত পার্ক মাত্র একটিই। পার্কের একপাশে খুলনার অন্যতম বড় বেসরকারি হাসপাতাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড, অন্যপাশে মসজিদ,পত্রিকা অফিস, বিভিন্ন চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার, ক্লিনিক অবস্থিত। উল্লেখ্য রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বিগত দিন গুলোতে পার্কটির যথেচ্ছ ব্যবহারে একদিকে শিশুরা যেমন খেলার মাঠ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের রোগীরা কষ্ট পেয়েছেন, ক্ষুব্ধ হয়েছেন এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীরা। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে পার্কটিতে মেলাসহ সব ধরনের গাণ-বাজনার আয়োজন স্থায়ী ভাবে বন্ধ করা প্রয়োজন। খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) থেকে জানা গেছে, নগরীতে কেসিসির পার্ক রয়েছে ৬টি। এর মধ্যে গোলকমনি, নিরালা ও সোনাডাঙ্গা শিশু পার্ক রয়েছে শুধু নামেই। সেখানে বিনোদনের নূন্যতম পরিবেশ ও সরঞ্জাম নেই। হাদিস পার্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচি থাকায় সেখানে শিশুদের খেলার পরিবেশ নেই। খালিশপুর শিশু পার্কটি ব্যক্তি পর্যায় ইজারা দেওয়া। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএর) বয়রা মুজগুনী অংশে অবস্থিত পার্কটি ব্যক্তি পর্যায়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এ ঝাড়া দেয়া আছে। এই সকল পার্কে অতিরিক্ত প্রবেশ মূল্যের কারণে সেখানে খুলনার নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুরা প্রবেশের সুযোগ পান না। একমাত্র জাতিসংঘ শিশু পার্কটিতে শিশুসহ সব বয়সের নারী পুরুষ নিয়মিত ভিড় করেন। উল্লেখ্য ভাঙ্গাচোড়া রাইড গুলোতে কোনো রকম বিনোদন খুঁজে বেড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা। এখানেও শুভঙ্করের বড় একটি ফাঁকি দেখা যায় কারণ দুই ঈদসহ বছরের বিভিন্ন সময় জাতিসংঘ পার্কটি ইজারা দেওয়া হয়। তখন খেলাধুলা বন্ধ থাকে। এজন্য জাতিসংঘ পার্কে স্থায়ী ভাবে সব ধরনের আয়োজন বন্ধ রাখার দাবি দীর্ঘদিনের। কেসিসি থেকে জানা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘ পার্কে ৭ দিনের জন্য ঈদ মেলা করার জন্য আবেদন করেছেন সালমানস ইউকে নামের একটি সংগঠনের আহবায়ক মেহেদী হাসান শাকিল। ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কয়েকজন পার্কটি এই সংগঠনকে ইজারা নেওয়ার জন্য তদবির করছেন। গত ১২ মে ২০ দিনের জন্য ঈদ মেলা করতে পার্কটি ব্যবহারের জন্য অনুমতি চেয়েছেন ২৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জামির হোসেন দিপু। গত ১৩ মে খুলনা জেলা যুবদলের সাবেক সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহুল হাসান শুভ ২৩ দিনের জন্য ঈদ মেলা আয়োজনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। পরদিন ১৪ মে ঈদ মেলা আয়োজনের আবেদন করেছেন আব্বাস উদ্দীন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বাচ্চু। তিনি ১০ দিনের জন্য পার্ক ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছেন। এর আগে বিনা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি কোম্পানি ৭ বছরের পর জাতিসংঘ পার্কটি ইজারা নেওয়ার আবেদন করেছেন। আরও দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে মেলার আয়োজনের জন্য মৌখিক অনুরোধ করা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে তারাও আবেদন করতে পারেন। কেসিসির সূত্রটি জানায়, মেলার আয়োজনে পার্কে ৩০/৪০টি স্টল বসে। ঈদ, পহেলা বৈশাখসহ মেলা থেকে লাখ লাখ টাকা আয় হয় আয়োজকদের। এ কারণে আওয়ামী লীগের সময় থেকে পার্কটিতে মেলার আয়োজন করতে তৎপর থাকেন কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন। খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) এর এস্টেট অফিসার গাজী সালাউদ্দিন গণমাধ্যমের কাছে বলেন, পার্কটি ইজারা নিতে ৫ জন লিখিত ভাবে এবং দুই জন মৌখিক ভাবে আবেদন করেছেন। সকলেই যার যার পক্ষে জোরালো তদবির করছেন। তদবিরের চাপে কর্মকর্তারা সবাই অস্বস্তি রয়েছেন। ইজারার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান গণমাধ্যমের কাছে বলেন, নগরীর প্রানকেন্দ্রে একমাত্র উন্মুক্ত জাতিসংঘ শিশু পার্কটিতে সব ধরনের বাণিজ্যিক আয়োজন বন্ধ করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পার্কে শিশুদের দোলনা, স্লিপার গুলো সংস্কার, খেলার উপযোগী রাইড আরও বাড়ানো, সারাবছর যাতে পার্কটি খোলা থাকে এবং বিনামূল্যে শিশুরা পার্কের সব খেলনা ব্যবহার করতে পারে-তার দাবি জানাই। এই দাবিতে আমরা শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ভাবে কেসিসির প্রশাসক খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়ের কাছে কাছে যাব।