মো: আল মাসুম খান
খুলনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মিথ্যা তথ্য ও প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি যুবকদের রাশিয়ায় পাচার করার অভিযোগ উঠেছে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় যশোরে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার বড় মেঘলা গ্রামের জাফর হোসেনকে রাশিয়ায় ক্লিনার বা শেফের সহকারী পদে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরব হয়ে রাশিয়ায় পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে জাফরসহ আরও ৯ যুবক বুঝতে পারেন, তাদের রাশিয়ার সেনাবাহিনীর হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে লড়াই করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার ২৪ জুন যশোর মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ একটি মামলা দায়ের করেছেন জাফরের ভাই বজলুর রহমান। মামলায় চার জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আদালতের বিচারক ড. মো: আতোয়ার রহমান সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযুক্তরা হলেন—
এসএম আবুল হাসান, চেয়ারম্যান, ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড, কলাবাড়িয়া, কালিয়া, নড়াইল
ফাবিহা জেরিন তামান্না, তার সহযোগী, আশকোনা, দক্ষিণখান, ঢাকা
আলমগীর হোসেন দেলোয়ার, মাঝেরপাড়া, লোহাগড়া, চট্টগ্রাম
শফিকুর রহমান, মালিক, ভ্যাকেশন প্ল্যানার্স, নয়াপল্টন, ঢাকা
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা জাফর হোসেনের কাছ থেকে রাশিয়ায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে মোট সাত লাখ ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। বলা হয়, সরাসরি রাশিয়ায় যাওয়া যাবে না, প্রথমে সৌদি আরব যেতে হবে। পরে ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর জাফরসহ ১০ জনকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়।
সেখানে দুই মাস থাকার পর ২২ ডিসেম্বর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গ শহরে। সেখানে পৌঁছার পর আলমগীর হোসেন দেলোয়ার নামের আরেক ব্যক্তি তাদের গ্রহণ করেন এবং জানানো হয়, চাকরিতে যোগদানের আগে ২০ দিনের একটি ট্রেনিং করতে হবে।
কিন্তু সেই তথাকথিত ‘ট্রেনিং’ ছিল সামরিক প্রশিক্ষণ। পরে তারা জানতে পারেন, তাদের নামে এক বছরের জন্য রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করার চুক্তি করা হয়েছে, যার বিনিময়ে জনপ্রতি ১৪ হাজার মার্কিন ডলার আদায় করেছেন পাচারকারীরা।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে আকরাম হোসেন নামে একজন যুবক কৌশলে পালিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে উঠে এসেছে, রাশিয়ায় থাকা অন্য বাংলাদেশিরা এখন একটি বাঙ্কারে অবস্থান করছেন এবং রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী মো: রেজওয়ান সেতু জানান, প্রতারণা ও মানবপাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশি তরুণদের যুদ্ধের মাঠে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে—এটি একটি ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা।
এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোরও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। পাশাপাশি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার এবং ভুক্তভোগীদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি উঠেছে।