নিউইয়র্ক প্রতিনিধি, বাপস নিউজ।
তরুণ, প্রগতিশীল এবং মুসলিম—এই তিন পরিচয়কে কেন্দ্র করে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে মনোনয়ন পেয়ে তিনি উঠে এসেছেন আন্তর্জাতিক শিরোনামে।ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই রাজনীতিকের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও সমর্থন যেন রাজনীতির প্রচলিত ধারাকেই পাল্টে দিয়েছে। একদিকে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দর্শন, অন্যদিকে তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ—এই দুইয়ের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে জোহরানের জনপ্রিয়তা।
ট্রাম্পের কটাক্ষেই মিলেছে বাড়তি সুবিধাজোহরানের উত্থান দেখে চুপ থাকতে পারেননি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ জোহরানকে আক্রমণ করে ট্রাম্প বলেন, “ও এক কট্টর বামপন্থী উন্মাদ। তার চেহারা বাজে, গলা কর্কশ, খুব একটা বুদ্ধিমানও না।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এমন মন্তব্যই জোহরানকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। কারণ, এ ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবং সহানুভূতি তৈরি করেছে জোহরানের পক্ষে।নিজেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই কটাক্ষের জবাব দিয়েছেন জোহরান। তিনি বলেন,
“আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন—একজন প্রগতিশীল মুসলিম অভিবাসী, যে নিজের বিশ্বাস থেকে রাজনীতি করে।”তৃণমূল থেকে উঠে আসা এক ভিন্নধারার রাজনীতিক
সাধারণ মানুষের সহযোগিতাতেই এই তরুণ রাজনীতিবিদের পথচলা। কোনো বড় কর্পোরেট লবি বা ধনীর পৃষ্ঠপোষকতা নয়—তাঁর শক্তি নিচুতলার মানুষ, অভিবাসী পরিবার ও স্বেচ্ছাসেবক দল।নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যেও জোহরানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিশেষ করে তিনি যখন বিজয়োত্তর বক্তৃতায় বলেন, “বাংলাদেশি আন্টিরা না থাকলে এই বিজয় সম্ভব হতো না,” তখন এ বক্তব্যে কমিউনিটির মধ্যে আবেগের জোয়ার বইতে দেখা যায়।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে নজরকাড়া পরিকল্পনা জোহরান মামদানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—
প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যায্য মূল্যের সরকারি মুদি দোকান দুই লাখ নতুন সাশ্রয়ী অ্যাপার্টমেন্ট
ভাড়ানিয়ন্ত্রিত অ্যাপার্টমেন্টে ২০২৯ সাল পর্যন্ত ভাড়া না বাড়ানোর অঙ্গীকার শিশু পরিবারে বিনামূল্যে চাইল্ড কেয়ার সরকারি বাসে বিনামূল্যে চলাচলের ব্যবস্থা
এই প্রতিশ্রুতিগুলোর মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং চাহিদাকেই তুলে ধরেছেন। বলেছেন,
“আমার রাজনীতি ধনীদের জন্য নয়, বরং শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের জন্য।”
আন্তর্জাতিক পরিবারে জন্ম, নিউইয়র্কে গড়ে ওঠা জোহরান মামদানি জন্ম নেন উগান্ডার কাম্পালায়। বাবা মাহমুদ মামদানি একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। মা মীরা নায়ার একজন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা। মাত্র সাত বছর বয়সে নিউইয়র্কে চলে আসেন তিনি। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশি ভোটারদের জন্য বাংলা ভিডিও বার্তা
নিউইয়র্কের প্রথম নির্বাচিত বাঙালি নারী কাউন্সিলর শাহানা হানিফ-এর সঙ্গে বাংলা ভাষায় একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে জোহরান বলেন, “আমরা একসাথে একটি ন্যায্য শহর গড়তে পারি। এই নির্বাচনে আপনার ভোট বদল আনতে পারে।” এই বার্তাটি নিউইয়র্কের বাংলাদেশি ভোটারদের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলে। বিশেষত যারা ভাষাগত কারণে মূলধারার রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন, তাদের কাছে এই বার্তা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
ছবিতে: মাঝে জোহরান মামদানি, বামে রাজনীতিক ও সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, ডানে ডেমোক্র্যাট দেলওয়ার মানিক। স্থান: বাংলাদেশ ডে প্যারেড, নিউইয়র্ক, মে ২০২৫ আগামী ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচন। যদিও এখনও ভোটগ্রহণ বাকি, তবে অনেকেরই মত—জোহরান মামদানি ইতিমধ্যেই মানুষের আস্থা ও ভালোবাসায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন।