প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্ক:
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীরদ্বীপ জেটিঘাটে জামায়াতপন্থী এক নেতার তত্ত্বাবধানে ‘খাস কালেকশনের’ নামে বেআইনিভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যমে বিষয়টি উঠে আসার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিনের হস্তক্ষেপে সোমবার (৭ জুলাই) তা বন্ধ করা হয়।ইউএনও শেখ এহেসান উদ্দিন জানান, “জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত শাহপরীরদ্বীপ জেটিতে যাত্রী টোল ছাড়া অন্য কোনো ধরনের আদায় বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় সূত্র এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরে জেটিঘাটের ইজারা না হওয়া সত্ত্বেও বিগত তিন মাস ধরে জেলা পরিষদের কিছু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় ‘খাস কালেকশনের’ নামে অর্থ আদায় করা হচ্ছিল। অভিযোগ রয়েছে, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ ও কক্সবাজার পৌর জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একটি চক্র অবৈধভাবে এই অর্থ সংগ্রহ করছিল।
চক্রটি অফিসের এক নৈশ্যপ্রহরীকে ‘ইজারাদার’ দেখিয়ে টোল আদায় করছিল এবং ঘাটটি একাধিক ব্যক্তির কাছে নানা অংশে বিক্রি করে দেয়। অনুসন্ধানে উঠে আসে, শাহপরীরদ্বীপ জেটি ১৫ লাখ, জালিয়াপাড়া ঘাট ৭ লাখ এবং দক্ষিণ পাড়া ঘাট ২ লাখ টাকায় উপবিক্রি করা হয়।
এছাড়াও বড়শি ফেলার জন্য ৫০ হাজার টাকা, পানি সংগ্রহের জন্য ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়।
প্রকাশ হওয়ার ভয়ে ২৬ জুন একটি ‘খাস কালেকশন অনুমোদনের’ চিঠি প্রস্তুত করা হয়। দাবি করা হয়, চিঠিটি ৯টি সরকারি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তারা জানান, তারা এ ধরনের কোনো চিঠি পাননি।
এছাড়া যাত্রী ও ট্রলার থেকে নেওয়া টাকার জন্য ছাপানো হয়েছিল অফিস সহায়কের নামে রশিদ—যা সরকারি বিধির ঘোরতর লঙ্ঘন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ইজারা না হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে জেলা পরিষদের প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির একজন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় খাস কালেকশন আদায় করা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একজন পিয়নকে—যিনি কোনোভাবেই এমন দায়িত্ব পালনের যোগ্য নন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, “বিষয়টি নজরে এসেছে। ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা পরিষদের সিইও মোহাম্মদ-আল-মারুফের বক্তব্য নিতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, “উচ্চ আদালতের একটি রিট মামলার কারণে জেটির ইজারা বন্ধ রয়েছে। তাই জেলা পরিষদ খাস কালেকশনের উদ্যোগ নেয়। আমি আবেদনের মাধ্যমে সম্পৃক্ত হয়েছি। আমরা নিয়ম অনুযায়ী অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছি। তবে প্রশাসন যাত্রী টোল বাদে বাকি আদায় বন্ধ করে দিয়েছে।”
২০০৪ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে শাহপরীরদ্বীপ জেটিটি নির্মাণ করে। ২০০৬ সালে এটি জেলা পরিষদের রক্ষণাবেক্ষণে দেওয়া হয়। এর পর থেকে প্রতিবছর ইজারা দেওয়া হলেও ২০২৫ সালে ইজারা না হওয়ায়, এই সুযোগে একটি চক্র জেটি কেন্দ্রিক অর্থ আদায় করে আসছিল।