জানা যায়, নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান বিজয়, ক্রীড়া সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফ উল্লাহ সাইফ, বিতর্ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শরীফ উদ্দীন, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল হাসান, ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলাসহ অন্তত ত্রিশ জনের নামে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে যাদের বিতর্কিত করা হচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বজলুর রহমান বিজয়। ছাত্রদলের চার কমিটির পদধারী নেতা। জুলাই আন্দোলনে খেটেছেন জেল। শরীফ উদ্দীন আগে থেকেই হল কমিটির নেতা। আব্দুল্লাহ আল কাফি পড়েছেন নাম বিভ্রান্তিতে। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্র। একই নামে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা আব্দুল্লাহ আল কাফি ছিলেন এফ রহমান হলের ছাত্র।
মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ সাইফ গণমাধ্যমকে জানান, হলে থাকাকালীন বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে যেতেন। সে সময়ে হলে থাকতে হলে বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে যেতে হত। তিনি ছাত্রদলের আগের কমিটির পদধারী নেতা ছিলেন। বিগত সরকারের সময়ে রাকিবুল হাসান ছাত্রলীগের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে হল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বলেও জানান তিনি। ছাত্রদলের হল কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবকেও ছাত্রলীগ বলে বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রদলের এক নেতা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে কেউ কেউ বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। যারা ৫ আগস্টের পূর্বে ছাত্রদলের পোস্টেড ছিল এবং পোস্টেড না থাকলেও ৫ আগস্টের আগে থেকে যারা ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিল, তাদেরকে নিয়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। এ থেকে বোঝা যায়, এখানে ঘৃণা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম কাজল এবং তার অনুসারীরা এই কমিটিকে বিতর্কিক করতে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। তাদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের স্ক্রিনশট ফাঁস হয়েছে। যেখানে কাজল তার অনুসারীদের বিতর্কিত পোস্টগুলোর (ফেসবুক) তালিকা করতে এবং গুজব ছড়াতে নির্দেশ দিতে দেখা গেছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের ঘনিষ্ঠ কাজল। খোকনের প্রভাব খাটিয়ে কমিটিতে ‘শিবির নেতা’ এস এম হলের সাবেক শিক্ষার্থী আল মামুন ইলিয়াস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক জাকি তাজওয়ার সমুদ্রকে বর্তমান কমিটিতে পদায়নের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি কাজলের অনুসারী জারিফ রহমান প্রত্যাশিত পদ পায়নি। এসব কারণে তিনি এ কমিটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম বলেন, ঢাবি শাখা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষাণার পর কিছু অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকজনের পদ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ যদি গ্রুপিং রাজনৈতিক কারণে নিজ সংগঠনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে অন্যকিছু করতে চায়, তাহলে তা সংগঠন দেখবে।অভিযোগ রয়েছে, কাজলও ২০১৯ সাল পর্যন্ত জিয়া হলে থেকেছেন। সেখানে তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিরের অনুসারি ছিলেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ফজলুর রহমান খোকন ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার পর তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে ছাত্রদলের রাজনীতিতে আসেন কাজল।তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কাজল গণমাধ্যমকে বলেন, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে গুজব ছড়ানোর নির্দেশনা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আল মামুন ইলিয়াসকে শিবির নেতা বলে উল্লেখিত তথ্যও মিথ্যা। তিনি ছাত্রদলের গত কমিটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া জাকি তাজওয়ার নামে আমাদের কোনো কর্মী নেই।তিনি বলেন, আমাকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিরের অনুসারী এবং ২০১৯ সাল পর্যন্ত জিয়া হলে অবস্থানকারী হিসেবে উল্লেখ করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাজনৈতিকভাবে হেয় করার প্রয়াস। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন তথ্য প্রচার করেছে বলে মনে হচ্ছে।