প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্ক:
জ্যামাইকায় চলমান দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ পুড়েছে ক্যারিবিয়ানদের পেস তাণ্ডবে। তার মধ্যে স্বাগতিক পেসার জেডেন সিলেস ১৫ ওভার পাঁচ বলে হাত ঘুড়িয়ে মাত্র পাঁচ রান দিয়ে শিকার করেন চার উইকেট। তাতে গড়েন এক কীর্তি। ১৯৭৮ সালের পর টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কৃপণ বোলিং হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান তিনি। শুধু তিনি একাই না, বাকি পেসাররাও ছিলেন দুর্দান্ত।তবে সময়ের ব্যবধানে তাদের সবাইকে ছাপিয়ে গতির প্রদর্শনীতে সব আকর্ষণ নিজের দিকে নিয়ে নেন টাইগার তরুণ পেসার নাহিদ রানা, তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার। ইনিংসে বল হাতে নাহিদের তাণ্ডব দেখার পর ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ সবার কাছে এই গতি তারকাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘নাহিদ রানাকে চিনে রাখুন, বাংলাদেশ এক্সপ্রেস’।চলমান এই টেস্টের নিজেদের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ১৬৪ রানেই গুটিয়ে যায়। পরে ক্যারিবিয়ানরা নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেই রানার গতিতে পড়ে বিপাকে। শুরুটা হয় ১৩তম ওভার থেকে। ঐ ওভারে নাহিদ নিজের তৃতীয় ওভার করতে আসেন, তখনো কোনো উইকেট হারায়নি স্বাগতিকরা ব্যাটাররাও বেশ আত্মবিশ্বাসী। ঐ ওভারে প্রথম ডেলিভারির গতি ছিল ১৫০.১ কিলোমিটার। পরেরটির গতি ১৪৯.২। পরের দুটি ডেলিভারির আবারও ছাড়িয়ে গেল দেড়শ কিলোমিটার। ঐ ওভারে ১৪৮ কিলোমিটার গতির নিচে নামেননি নাহিদ। ঐ ওভারের পর আর ২২ বছর বয়সি এই গতি তারকার সামনে দাঁড়াতে পারেনি ক্যারিবিয়ানরা। এই ইনিংসে ১৮ ওভার হাত ঘুড়িয়ে ৬১ রান দিয়ে তুলে নেন পাঁচ উইকেট। তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে উন্ডিজরা থামে ১৪৬ রানে। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো দলের খেলা প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানের ইনিংস।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্রিকেটার নাহিদের ছিল এটি সাদা পোশাকে ষষ্ঠ ম্যাচ। এর মধ্যে রাওয়ালপিন্ডিতে চার উইকেটের স্বাদ পেলেও এবারই প্রথমবার পেয়েছেন ফাইফারের দেখা। সোমবার দিনের খেলা শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এক ভিডিও বার্তায় নাহিদ বলেছেন, ‘সর্ব প্রথমত ওপরওয়ালার শুকরিয়া আদায় করতে চাই, টেস্টে প্রথমবার পাঁচ উইকেট পেয়েছি। বেশি কিছু চেষ্টা করিনি। শুধু চেষ্টা করেছি, ব্যাটসম্যানকে জায়গা না দিয়ে কীভাবে ‘লাইন টু লাইন’ বোলিং করা যায় এবং কোন পরিস্থিতিতে কোন ব্যাটসম্যানকে কীভাবে বোলিং করা যায়, সেই বোলিংটা করার চেষ্টা করেছি।’
স্কোরবোর্ডে মাত্র ১৬৪ রান নিয়ে লড়াই করা কঠিন। অথচ নাহিদ রানার দুর্দান্ত বোলিং ও তাসকিন- হাসানদের সমর্থনে বাংলাদেশ ১৮ রানের লিড পেয়েছে। নিজের বোলিং নিয়ে নাহিদ রানা বলেছেন, ‘আমার কাছে যেটা মনে হয় এই উইকেটে বেশি কিছু চেষ্টা না করে শুধু ‘লাইন টু লাইন’ বোলিং করে ব্যাটসম্যানকে সুযোগ না দিয়ে রান ছাড়া বোলিং করলে ব্যাটসম্যানরা অনেক কিছু করার চেষ্টা করে। আমি মনে করি, বোলারদের অত কিছু চেষ্টা না করে ‘লাইন টু লাইন’ বোলিং করাই এখানে ভালো।’ এদিকে বল হাতে নাহিদের গতির নতুন কিছু নয়।গেল কয়েক বছর ধরেই তিনি গতির প্রদর্শনী দেখিয়ে আসছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। ডিপিএল-বিপিএলে প্রায় নিয়মিতই গতি দিয়ে ব্যাটারদের নাস্তানাবুদ করেন তরুণ এই পেসার। সেখান থেকেই তার জাতীয় দলে উঠে আসা। তবে বাংলাদেশের সবশেষ পাকিস্তান সফরে তিনি দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের দ্রুতগতির বল করে রেকর্ড গড়ে হইচই ফেলে দেন। এর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের কোনো বোলার ১৫০ কিলোমিটার গতিতেও বল করতে পারেননি সেখানে নাহিদ করেছিলেন ১৫২ কিলোমিটার গতিতে।