প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্ক:
তাঁত শিল্পনির্ভর সিরাজগঞ্জে ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ব্যাপক চাহিদার কারণে তাঁতি ও শ্রমিকদের শাড়ি-লুঙ্গি তৈরিতে এখন কেবলই কর্মব্যস্ততা। জেলার পাইকারি হাটগুলোতেও বেচাকেনা এখন তুঙ্গে। শুল্ক মুক্ত কোটায় তাঁতবস্ত্র রপ্তানিকারকসহ এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা আশা প্রকাশ করছে, এ মৌসুমে ৯ হাজার কোটি টাকা ঘরে তুলবেন তারা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে একইভাবে উত্কৃষ্ট মানের হওয়ায় ঈদে ভারতীয়দের পছন্দের অন্যতম তালিকায় এ জেলার তাঁতের শাড়ি-লুঙ্গি, ধুতি-গামছা। এজন্য উত্পাদনের রেকর্ড সংখ্যক ৬০ ভাগ তাঁতবস্ত্র এবার রপ্তানি হচ্ছে ভারতের বাজারে।
সারা বছর মানুষের বস্ত্র চাহিদা মেটাতে সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্প অধু্যুষিত বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালীর এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া, সদর, কামারখন্দ উপজেলার ১৪ হাজার ৮৪৯টি কারখানায় হাতে ও মেশিনের ৪ লাখ ৫ হাজার ৬৭৯টি তাঁতে ২০ লাখ ৮ হাজার মানুষ শাড়ি, লুঙ্গি, ধুতি, গামছা, থ্রিপিসসহ অন্যান্য পোশাক তৈরি করছে। দুই ঈদ ও পূজাকে উপলক্ষ্য করে পরিচালিত ভারতের মুর্শিবাদের বিশ্বখ্যাত মুসলিন শাড়ি তৈরির বংশধরেরা এ শিল্পের বর্তমানে দুই মাসের প্রধান মৌসুম ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে দিন-রাত ব্যাপক চাহিদার বাহারি নকশার শাড়ি-লুঙ্গি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। তাঁতি ও শ্রমিকদের এখন বিরাম নেই। আগে যেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলত উত্পাদন। এখন সেখানে ভোররাত থেকে রাত ১০-০১১টা পর্যন্ত নিখুঁত বুননে মহাব্যস্ত তাঁতশ্রমিকেরা। চৌহালী উপজেলাধীন এনায়েতপুর থানার খামারগ্রামের জাতীয় কারুশিল্প পদকপ্রাপ্ত তাঁতি আফজাল হোসেন লাভলুর তাঁত কারখানায় নিয়োজিত কর্মচারী রনজিত্ কুমার, এনামুল হোসেন, তাঁতশ্রমিক ব্রাহ্মণগ্রামের আইয়ুব আলী ও বেলকুচির আবু বক্কার জানান, মহাজনের চাপ বেশি ভারতের ও সারা দেশের ব্যাপারীরা বেশি বেশি শাড়ি-লুঙ্গি চাচ্ছে। তাই বেশি উত্পাদনও করতে হচ্ছে আমাদের। এছাড়া কাজ বেশি করলে ঈদে বোনাসের পাশাপাশি অতিরিক্ত মজুরিতে পরিবারের সবার সঙ্গে ভালোভাবে ঈদ উত্সবে শরিক হতে পারব।
এদিকে চাহিদার কারণে দেশের শীর্ষ পাইকারি তাঁত কাপড়ের সিরাজগঞ্জে এনায়েতপুর, সোহাগপুর, শাহজাদপুর হাটেও এখন বেশ চাঙ্গাভাব। ৫০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা মুল্যের সুতি, জামদানি, সিল্ক, গাদোয়াল, ইকট, বুটিক শাড়ি ও ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা মূল্যের সুতি লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে এখানে। খুকনী গ্রামের ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ, খামারগ্রামের তফাজ্জল হোসেন বাবুল, গোপিনাথপুরের রমজান আলী শেখ, শিবলু হোসেন জানান, বেচা-বিক্রি বাড়লেও আনুপাতিক হারে লাভটা বেশি হচ্ছে না। তবে গত দুই মাস ধরে বাজার বেশ ভালো যাচ্ছে।
এদিকে ভারতের বাজারে বিশেষ করে কলকাতা, আসামসহ বিভিন্ন প্রদেশে এখানকার উত্পাদিত সুতি বাহারি শাড়ির চাহিদা বেশ। এজন্য কলকাতার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নারায়ন চন্দ্র বসাক, রবি শংকর, লাল্টু বসাক, রাজু স্বপন, প্রিয় গোপাল বিষয়ী, সাহা টেক্সস্টাইলসহ শীর্ষ আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা এখান থেকে শাড়ি-লুঙ্গি নিয়ে সমগ্র ভারতবর্ষে সরবরাহ দিচ্ছে। তাদের অভিমত, এখানে উত্পাদিত সুতি শাড়ি গুণমানে ভারতের চেয়ে ভালো, দামও কম। তাই দেশটিতে পছন্দে সেরা সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল অঞ্চলের শাড়ি।ভারতে নানাভাবে হাজারো ব্যবসায়ীরা শাড়ি রপ্তানি করে থাকে। এর মধ্যে শীর্ষ রপ্তানিকারক এনায়েতপুরের খামারগ্রামের আলহাজ আফজাল হোসেন লাভলু। তিনি জানান, প্রতিদিন গড়ে সিরাজগঞ্জে অন্তত দেড়শ কোটি টাকার তাঁতবস্ত্র উত্পাদন হয়। তাতে দুই মাসের এ মৌসুমে অন্তত ৯ হাজার কোটি টাকার তাঁঁতবস্ত্র বাজারজাত হবে। দেশের চাহিদার অধিকাশং মিটিয়ে এর মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগই এবার রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। এদিকে তাঁতশিল্পের উত্পাদিত বস্ত্রের বাজার প্রসারে অর্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ সিরাজগঞ্জ তথা দেশকে সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখছে অর্থনীতিতে বললেন সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন ও সিরাজগঞ্জ চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান বাচ্চু। তারা বলেন, নিজ প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প বিশ্ব দরবারে এখন প্রশংসিত নাম।