প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্ক:
এখনো জমে ওঠেনি ঈদের কেনাকাটা। বেচাকেনায় এখনো সন্তুষ্ট হতে পারছেন না দোকানিরা। তারা বলছেন, প্রতি বছর ১৫ রমজানে মার্কেটে এতবেশি ভিড় থাকত যে, আমরা দম ফেলার সময় পেতাম না; সেখানে এখনো দোকানে অল্পকিছু মানুষ কেনাকাটা করছে। সন্ধ্যার পর সবসময় বেচাকেনা বেশি হলেও, এ বছর সন্ধ্যার পর মাকের্ট ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে।সোমবার (১৭ মার্চ) ছিল ১৬ রমজান। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র পান্থপথে অবস্থিত বসুন্ধরা শপিংমল। সেই সঙ্গে রাপা প্লাজা, জেনেটিক প্লাজা, সানরাইজ প্লাজা, অর্কিড প্লাজা ঘুরে দেখা যায় এবং কথা হয় বেশিকিছু ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে। বসুন্ধরা সিটির নিচতলায় রেডি পোশাকের ব্র্যান্ড ‘এমব্রেলা’। সেখানে চলছে তাদের সব পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ হারে মূল্যছাড়। এই মূল্যছাড়ের নাম দিয়েছে তারা ‘ঈদ সালামি অফার’। দোকানের সুপারভাইজার রবিন বলেন, আগের বছরের চেয়ে এ বছর বেচাকেনা কম। ইস্কাটন থেকে ৯ বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন। তিনি নিজের জন্যে এমব্রেলা থেকে সেমি ইস্টিস থ্রিপিস কিনেছেন ৪ হাজার ৬৫৯ টাকায়। বলেন, এমব্রেলার কোয়ালিটি নিয়ে ভাবতে হয় না। তাদের কাপড়ের কোয়ালিটি বরাবরই ভালো। অনেক বছর ধরে কিনি এই ব্র্যান্ডের পোশাক নিজে এবং বাচ্চাদের পরান বলে জানান।
‘মাইক্রো’ ব্র্যান্ডের দায়িত্বরত একজন কর্মী জানান, বেচাকেনা ভালো নয়। কেন এ বছর বেচাকেনা ভালো হচ্ছে না-এমন প্রশ্ন করেন তিনি। মাইক্রোতে পাওয়া যাচ্ছে ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, পোলোশার্ট, জিন্সপ্যান্ট। মেয়েদের জন্যে জন্যে আছে আছে ওয়ান পিস, টু-পিস, প্যান্ট, উপস ইত্যাদি। ঐ বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, আগে ১৫ রমজানের পর ক্রেভার ভিড়ে ফ্লোরে দাঁড়ালের মতো অবস্থা থাকত না, আর এখন দেখেন পুরোই ফাঁকা। এই শোরুমে একজন ক্রেতা পোশাক দেখছিলেন, জিগ্যেস করা হলো ঈদের কেনাকাটা করছেন? তিনি বলেন, তেমন কিছু কিনছি না, প্রয়োজনীয় কিছু যদি ভালো লাগে তো বিনব; নয় তো কিনব না, এটা ঈদের কেনাকাটা নয়।
অন্য একটি ব্র্যান্ড ‘টুয়েলভ’। এই শোরুমের ম্যানেজার রবিউল হাসান বলেন, আমাদের এখানে লেডিস-জেনস দুইয়ের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে তাদের পোশাক তৈরি হয়েছে মিক্সকটন এবং ব্লান্ডেট কটন দিয়ে। এরমধ্যে আছে এন্ড্রয়ডারি, হাল্কা জরির সুতোর কাজ, হাতে-গলায় পাইপিন দেওয়ার কারণে আর আর এই ব্রান্ডেট কটনের কারণে পোশাকগুলোর ভেতরে একটা আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট হয়েছে আর রঙের মধ্যে তারা একটু ফেড বা গতানুগতিক র বাইরে ম্যাটফিনিস দিয়ে রংটিকে আকর্ষণীয় করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুর থেকে আসা নুরুজ্জামান চৌধুরী দম্পতির সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এবার ঈদ কেনাকাটায় খুব একটা আগ্রহ নেই। বাচ্চাদের জন্যে মাকের্টে আসা। তারা তো দেশের পরিস্থিতি কিংবা বাবার হাতে টাকা আছে কি- নাই, এসব বোঝে না। কিংবা এসব বোঝার মতো বয়সও ওদের হয় নাই, ফলে তাদের জন্যেই কেবল কেনাকাটা করছি। আমাদের জন্যে কিছুই কিনি নাই। সঙ্গে থাকা তার স্ত্রী বলেন, সন্ধ্যার পরে এখন খুব প্রয়োজন ছাড়া বাহির হই না। তাই এ সময়টাতে বাচ্চাদের নিয়ে। নিয়ে আসা।
ক্রেতাদের কেনাকাটায় অগ্রহ কম বলে মন্তব্য করেন জেন্টেল পার্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. জুয়েল তিনি বলেন, আমাদের এই মাকের্টে চারটা শোরুম, সবগুলোতেই বেচাকেনা কম। শুধু আমাদের শোরুমে নয়, মার্কেট জুড়েই এক অবস্থা। তিনি জানান, তাদের দোকানের পাঞ্জাবি, কাবলির বেশ চাহিদা। তাদের কাপড় আসে দেশের বাইরে থেকে, সেই কাপড়ে দেশেই তৈরি হয় পোশাক। মেয়েদের টুপিস, ওয়ানপিস আছে। কাপড়ের কারণে জেন্টেলপার্ক ব্র্যান্ডের পোশাক সবসময় ব্যতিক্রম বলে জানান। তাদের পোশাকের কাপড়গুলো হচ্ছে পাকিস্তানি টরে, এন্ডি কটন, ধুপিয়ান কটন, রেমি কটন। তাদের কাবলি পাঞ্জবির হাতে ও গলায় পেটানো এম্ব্রয়ডরি করা, আর বোতামগুলো এন্টিক কালারে মেটালের। যা দেখতে পোশাকের অবয়বে এনেছে আভিজাত্য। এই অভিজাত লুকের কারণেই এই ফ্যাশন হাউজের কাবলি ও পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। তাদের কাবলি সেটের সর্বোচ্চ মূল্য ৬ হাজার ৩৪৫ টাকা, আর পাঞ্জাবির সর্বোচ্চ মূল্য ৪ হাজার ১৯১ টাকা, আর সর্বনিম্ন মূল্য ১ হাজার ৯৯০ টাকা। জর্ডানা ক্লাবের স্বত্বাধিকারী বলেন, আমাদের
এই মার্কেটে অনেক দূরদূরান্ত থেকে মানুষ শপিং করতে আসে; কিন্তু এবার সেটা পাচ্ছি না। আগে সন্ধ্যার পরেই ঈদের বেচাকেনা বেশি হতো আর এ বছর সন্ধ্যার পর ক্রেতা খুব কম থাকে। তিনি বলেন, যেসব মানুষ দেখছেন এদের সবাই আবার ক্রেতা নন। অনেকে এসেছেন দেখতে। ক্রেতা অনেক কমে গেছে এ বছর। তিনি জানান, তাদের দোকানে সব বাচ্চাদের পোশাক। এসব আসে চায়না, ইন্ডিয়া থেকে।
দোকানিরা জানান, বেচাকেনা হচ্ছে মূলত নারী ও শিশুদের পোশাক। মার্কেট জুড়েই চৌখে পড়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। এদিকে এ ব্লকের বাচ্চাদের পোশাকের শপ ‘স্পাইডারম্যান’-এর বিক্রয় প্রতিনিধি মো. মোক্তার বলেন, আমাদের দোকানে বাচ্চাদের ঘারারা, আফগানি ওয়েস্টান ড্রেস পাওয়া যাচ্ছে। ছেলে শিশুদের প্যান্ট-শার্ট ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে জানান।
‘স্মাটেক্স’-এর শোরুমে কথা হয় বিক্রয়কর্মী তারেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের বেশির ভাগ পোশাক কোরিয়ান সিল্কে তৈরি আর পাঞ্জাবি মিক্সকটনে তৈরি, ফলে পাঞ্জাবিতে এটা সাইনি ভাব চোখে পড়ে। অল্প এস্ত্রয়ডারি কাজে সেমিলং পাঞ্জাবি ভালো চলছে। তাদের শোরুমে বাচ্চাদের পোশাক আর নারীদের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান।
ইজি ফ্যাসন হাউজের টিশার্ট বেশি বিক্রি হচ্ছে, তবে বেচাকেনা আগের চেয়ে খারাপ বলে জানান বিক্রয়কর্মী তানভির। তিনি জানান, তাদের টি-শার্টের প্রাইজ ৭৯০ টাকা থেকে ২ হাজার ৯৮০ টাকা পর্যন্ত। তিনি জানান, তাদের পোশাকের কাপড় আসে দেশের বাইরে থেকে আর তৈরি হয় নিজস্ব কারখানায় নিজস্ব ডিজাইনারের ডিজাইনে। তবে তাদের টি-শার্ট আসে চায়না থেকে।