শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০২:২২ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
প্রশ্নে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি, বাতিল হলো পরীক্ষা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন ফের চালু করলো যুক্তরাষ্ট্র জুলাই শুধু বিপ্লবের না, হান্নান মাসউদের মতো ধান্দাবাজদের কপাল খোলার মাস : নির্ঝর এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ, ভয় দেখানোর জন্য: নাহিদ ইসলাম ভ্রাম্যমান আদালতে দুইজনকে দণ্ড দেওয়ায় থানায় হামলা-ভাঙচুর, পুলিশসহ আহত ২০ বিচারিক আদেশে জামায়াতের পুরনো নিবন্ধনই বহাল, গেজেট প্রকাশ করল ইসি। জাতীয় সমাবেশ সফল করতে বৈঠক ১৯ জুলাই ঐতিহাসিক জাতীয় সমাবেশে অংশ নেওয়ার আহ্বান; গোলাম পরওয়ারের। বিভাগীয় শহরেও হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনে রাজনৈতিক ঐকমত্য : অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বরিশালে যুগান্তর ব্যুরো প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা ; বিএমএসএফের প্রতিবাদ বান্দরবানে সেনাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান: ‘কেএনএফ’-এর শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ দুইজন নিহত। শার্শা সীমান্তে ৭ কোটি টাকার স্বর্ণ ও ভারতীয় পণ্য উদ্ধার, আটক ১২ বিএনপির দফা নয়, অপকর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান ও অ্যাকশন চাই: সারজিস আলম আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের প্রস্তাবে একমত বিএনপি কালীগঞ্জে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেষ্টুনীসহ বৃক্ষ রোপন ও অসহায় নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরন জলবায়ু মোকাবিলা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সুইডেন সহায়তা করছে: পরিবেশ উপদেষ্টা মাত্র দু’বছর পিছিয়েছে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি : পেন্টাগন থাইল্যান্ডে আবারও ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী বদল : নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিতে প্রস্তুত রূপসায় শহীদ ইয়াসিনের করব জিয়ারত করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বীরগঞ্জে বিদায় প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিককে রাজকীয় সংবর্ধনা টেলিকম খাতে নতুন নীতিমালা নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ

মহানবী (সা.)–এর হিজরত কেন মদিনায় হলো?

ডেস্ক রিপোর্টঃ / ১৬২
আপডেটঃ শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪

প্রতিদিনের স্বদেশ ডেস্কঃ
কুরাইশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নবীজি (সা.) মুসলিমদের প্রথমবার মক্কা ছাড়ার অনুমতি দেন নবুয়তের পঞ্চম বর্ষে। ৬১৩ খ্রিষ্টাব্দে আরবি রজব মাসে চারজন নারীসহ ১২ বা ১৫ জন মানুষ আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া) উদ্দেশে যাত্রা করেন। ‘মক্কার সবাই মুসলমান হয়ে গেছে’, এমন খবর শুনে সবাই কয়েক মাসের মাথায় জন্মভূমিতে ফিরে আসার পথে রওনা দেন। কাছাকাছি পৌঁছে শোনেন খবরটি মিথ্যা। কয়েকজন যে পথে এসেছেন সে পথেই ফিরে যাবেন বলে থমকে দাঁড়ান, কয়েকজন মক্কায় এসে থেকে যান। যাঁরা আবিসিনিয়ায় ফিরে যান, তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও শতাধিক নারী-পুরুষ। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন নবীজির চাচাতো ভাই জাফর ইবনে আবু তালিব (রা.)।
নবীজি তাঁদের সঙ্গে ছিলেন না। অবশ্য আবিসিনিয়ায় হিজরতকারীরা যখন আবার হেজাজের পথ ধরেন, ততদিনে নবীজি মক্কায়ও নেই। ৬২১ খ্রিষ্টাব্দের জুনের শেষ দিকে নবীজি ইয়াস্রিবে চলে গেছেন, যা পরে ‘মদিনাতুন্নবি’ অর্থাৎ নবীর শহর বা মদিনা নামে খ্যাত হয়েছে। আবিসিনিয়ার মুহাজিরগণ আরও প্রায় ৭ বছর পরে ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে সরাসরি মদিনায় এসে নবীজির (সা.) সঙ্গে মিলিত হন।প্রশ্ন হলো, নবীজি (সা.) আবিসিনিয়া বা অন্য কোথাও না গিয়ে মদিনায় হিজরত করলেন কেন?
এর বেশ কয়েকটি কারণ প্রখ্যাত সিরাত গবেষক আবুল আলি নদভি (রহ.) তাঁর নবীয়ে রহমত গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেছেন।
প্রথমত, আল্লাহর নির্দেশ। কী রহস্য ছিল এই নির্দেশের পিছনে তা-ও আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। দ্বিতীয়ত, ৬২১ ও ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে হজের সুযোগে মক্কায় একদল মদিনাবাসী যেভাবে নবীজির (সা.) হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছেন এবং নবীজিকে রক্ষার সর্বত শপথ করেছেন, তা আল্লাহ অত্যন্ত পছন্দ করেছিলেন। মদিনাকে দারুল হিজরত ও ইসলামের দাওয়াতের কেন্দ্র হিসাবে নির্বাচনের পেছনে মদিনাবাসীদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন ছিল তাই অন্যতম কারণ। তৃতীয়ত, ইয়াস্রিবের ভৌগোলিক সুবিধা। পর্বত, ঘন খেজুরের বন আর ‘হাররা’ (লাভা স্থান) তিন দিক থেকে বেষ্টিত নিরাপদ অঞ্চল। কৃষি অঞ্চল। সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সুদৃঢ় দুর্গ হিসেবে মদিনার অবস্থান তাই গুরুত্বপূর্ণ। আরব উপদ্বীপের কাছাকাছি আর কোনও শহর এ ব্যাপারে তার সমকক্ষ ছিল না।চতুর্থত, ইয়াস্রিবের অধিবাসীদের সহযোগী মানসিকতা। মদিনার প্রধান দুটি গোত্র আওস ও খায়রাজ জাতীয় মর্যাদাবোধ, আত্মসম্মান, অশ্বারোহণ ও শৌর্য-বীর্যে বিশিষ্ট ছিল। কোনো বড় গোত্র কিংবা হুকুমতকে কখনো তাঁরা কর বা জরিমানা দেয়নি। পঞ্চমত, মদিনার বনি আদি ইবনে নাজ্জার গোত্র ছিল বনি হাশিমের মাতৃকূল। সাহাবি আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) ছিলেন এই বংশেরই একজন। মদিনায় পৌঁছে নবীজি (সা.) তাঁর ঘরে অবস্থান করেছিলেন। বর্তমান সৌদি আরবের স্বপ্নদ্রষ্টা আবদুল ওয়াহাব নজদির (১৭০৩-১৭৯২) লেখা একটি সিরাত গ্রন্থ হলো মুখতাসার সিরাতুর রসুল (স.)। এই বইতে তিনি ‘সিরাতে ইবনে হিশাম’ থেকে নিয়ে এই পঞ্চম বিষয়টির একটা সারসংক্ষেপ লিখেছেন। তাঁর আলোচনাটি ‘ইয়াসরিবে কেন মহানবী (সা.) গেলেন? এই প্রশ্নের একটা চমৎকার মানবীয় কারণ দেখান। ব্যাখ্যাটা এমন: মহানবীর (সা.) দাদা আবদুল মুত্তালিবের বাবা হাশিম সিরিয়ার যাওয়ার পথে ইয়াস্রিবের সালমা বিনতে আমেরকে বিয়ে করেন। ইয়াস্রিবের দুটি প্রধান গোত্র আওস ও খাজরাজ। সালমা ছিলেন খাজরাজের শাখা বনু নাজ্জার অংশের মেয়ে। বিয়ের পরে ব্যবসার উদ্দেশ্যে হাশিম সিরিয়ায় গেলে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। সালমার গর্ভে রেখে যান তাঁর অনাগত সন্তান শাইবাকে।হাশিমের ছিল আরও তিন ভাই মুত্তালিব, আবদে শামস এবং বৈমাত্রেয় ভাই নওফল। বহু বছর পর মুত্তালিব জানতে পারেন যে তাঁর ভাইয়ের ছেলে ‘শাইবা’ (হাশিম-সালমার ছেলে) ইয়াস্রিবে আছেন। তিনি তাঁকে চাদরে পেঁচিয়ে মক্কায় নিয়ে আসেন। সালমাকে জানান, তাঁর ইচ্ছা, শাইবাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করবেন। মুত্তালিব ছিলেন হাশিমের পরে কুরাইশের নেতা এবং তাঁর কোনো সন্তানাদি ছিল না। মক্কার লোকেরা প্রথমে ভেবেছিল, ছেলেটা মুত্তালিবের দাস হবে। ফলে তাঁরা তাঁকে ‘আবদুল মুত্তালিব’ বা মুত্তালিবের দাস নামে ডাকতে থাকে। ধীরে ধীরে প্রজ্ঞায় সবাইকে ছাড়িয়ে মুত্তালিবের পর নেতৃত্বের শীর্ষে চলে আসেন ‘আবদুল মুত্তালিব’।
এ নিয়ে মুত্তালিবের অপর দুই ভাই নওফল ও আবদে শামসের সঙ্গে বিবাদ হয়। কুরাইশের অন্যান্য অংশেও সহায়তা না পেয়ে নিরুপায় আবদুল মুত্তালিব চিঠি লেখেন সেই ইয়াস্রিবে তাঁর মাতুলালয়ে তাঁর নাজ্জারি মামাদের কাছে। জানা যায়, কয়েক ছত্র কবিতার মাধ্যমে তিনি আর্জি জানিয়েছিলেন। তাঁর মামা আবু সা’দ বিন আদি ভাগ্নের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন। মক্কাবাসীদের সিরিয়ায় যাওয়ার প্রধান বাণিজ্যপথে যেতে ইয়াস্রিব হয়েই যেতে হতো। ফলে ইয়াস্রিবের প্রধানতম গোত্র খাজরাজি বা নাজ্জারিদের সঙ্গে শত্রুতার পরিণতি নিয়ে নিশ্চয় আবদে শামসের শঙ্কা ছিল। তা ছাড়া মক্কারই একটি গোত্র ‘বনু খুজায়া’ আবদুল মুত্তালিবের নাজ্জারি মামাদের সহায়তায় করেন। এমনকি তাঁরা ‘দারুন নদওয়া’তে (মক্কার কংগ্রেসনাল সভায়) নওফল ও আবদে শামসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন। উল্লেখ্য, হাশিমের দাদি মানে আবদে মানাফের মা আতিকার রক্ত ছিল বনু খুজায়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত।মামার পক্ষের এই শক্তি আবদুল মুত্তালিবকে মক্কার নেতৃত্বে পুনর্বাসনে সহায়তা করে।
আশ্রয়ের জন্য ইয়াস্রিব বা মদিনাকে বেছে নেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল আত্মীয়তার শক্তি। আত্মীয়-কুটুম্বের গুরুত্ব সে সময় আরবে ছিল বিরাট এবং একে উপেক্ষা করা যেত না। ইয়াস্রিবের ভূমি মহানবীর (সা.) দাদা আবদুল মুত্তালিবের সময় থেকেই তাঁর বংশধরদের জন্য প্রস্তুত হয়েই ছিল। যেমন আমাদের এখনকার সময়ের পলিটিক্সে এই ধরনের আত্মীয়তা সহায়তা করে থাকে। আবদুল মুত্তালিবের এই চাচা আবদে শামসের ছেলেই উমাইয়া। তাঁর ছেলে হারব। তাঁর ছেলে আবু সুফিয়ান। তাঁর ছেলে মুয়াবিয়া। তাঁর ছেলে ইয়াজিদ। বনু হাশেমের সঙ্গে বনু উমাইয়ার পূর্বেকার নেতৃত্বের প্রশ্নে এমন বৈরিতার রেশ জারি থাকা অস্বাভিক কিছু নয়। তা ছাড়া বনু খুজায়ার সঙ্গে সেই থেকেই আবদুল মুত্তালিব বংশের সদ্ভাব এবং হোদায়বিয়ার ঘটনার পরে তাঁদের ওপর যখন কুরাইশদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বনু বকর আক্রমণ করে, সেটাই হয়ে ওঠে মহানবীর (সা.) মক্কা অভিযানের প্রধান অনুঘটক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Theme Created By ThemesDealer.Com