বিকাশ ঘোষ, দিনাজপুর প্রতিনিধি //
বৈষম্য দূরীকরণে মাধ্যমিকস্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি জাতীয়করণ, জাতীয়করণের পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের পদায়ন বন্ধ রাখা ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোট দিনাজপুর সদর উপজেলা শাখা।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪) সকাল ১১টায় দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দিনাজপুরে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজো। এতে যোগ দেন মাধ্যমিক শিক্ষক অফিসাররা।
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে তারা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, একটি উন্নত, আধুনিক এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে সুষম, সুস্থ্ ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য সার্বজনীন শিক্ষার গভীর ও ব্যাপক আয়োজন অপরিহার্য। প্রাথমিক শিক্ষা হলো মৌলিক শিক্ষা, যা সকলকে গ্রহণ করতে হয়। তবে প্রাথমিক শিক্ষা মানবসম্পদ তৈরীর জন্য যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষা পেশাদারী জ্ঞান প্রদান করে এবং এর মাধ্যমে দেশের প্রতিভাবান পেশাজীবিরা অধিকতর উন্নত জীবিকার তাগিদে বিদেশে পাড়ি জমায়। শুধুমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষার মাধ্যমেই প্রকৃত জনসম্পদ সৃষ্টি করা সম্ভব।
কিন্তু পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার পরিকল্পিতভাবে মাধ্যমিক শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। জুলাই-আগষ্ট/২০২৪ এর বিপ্লব ছাত্র-জনতাকে বৈষম্যহীন দেশ গড়ার যে স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছে, তাতে আমাদের মধ্যেও নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস আপনার গতিশীল নেতৃত্বে মাধ্যমিক শিক্ষা পুনরুজ্জীবিত হবে এবং সেই স্বপ্নযাত্রায় আমরা আপনার সহযাত্রী হতে প্রস্তুত।
স্মারকলিপিতে শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোট ৪ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে। এসব প্রস্তাবনা নিম্নরুপ-
মাধ্যমিকস্তরের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৭% বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক- কর্মচারীর চাকরি এখন জাতীয়করণ করা অত্যন্ত জরুরী। একই শিক্ষাগত যোগ্যতা, একই পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষা একই শিক্ষা বোর্ডের আওতায় পরীক্ষা হলেও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা তোমাদের বাড়ি বিশাল প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদার বিশাল বৈষম্য রয়ে গেছে। এই বৈষম্য শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। তাই, শিক্ষার সকল অংশীজনের প্রাণের দাবি-মাধ্যমিক শিক্ষা অবিলম্বে জাতীয়করণ করা হোক।
শিক্ষা বিভাগের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো একাডেমিক ও প্রশাসনিক। শিক্ষকেরা মূলত একাডেমিক কাজে দক্ষ এবং তাঁদের সকল প্রশিক্ষণ পেড্যাগোজি বা শিক্ষণকেন্দ্রিক। তাঁরা শ্রেণি কক্ষের শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ায় দক্ষ। অন্যদিকে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারগণ দীর্ঘ ৩১ (একত্রিশ) বছরের অভিজ্ঞতায় প্রশাসনিক কাজে অভ্যন্ত এবং তাঁদের সকল প্রশিক্ষণই প্রশাসনিক কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে। শিক্ষকতা ও প্রশাসন ভিন্ন চরিত্রের, ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের এবং কাজের ধরনও আলাদা। শিক্ষকরা প্রশাসনিক দায়িত্বে সাধারণত অনভিজ্ঞ। যখন জেলা শিক্ষা অফিসার বা উপপরিচালক পদে শিক্ষকদের পদায়ন করা হয়, তখন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক শুন্যতা তৈরী হয় এবং শ্রেণি কক্ষে দক্ষ একজন শিক্ষককে প্রশাসনিক পদে বসানো হলে, প্রশাসনিক বিধি-বিধান সম্পর্কে পূর্ব জ্ঞান না থাকার কারণে তাঁরা অফিসের অভিজ্ঞতা অধস্তন কর্মীদের পরামর্শের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এর ফলে, দৃঢ় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া, যদি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদায়ন করা হয়, তখন প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা না বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রধানগণ তাঁদের অধীনে কাজ করতে অসন্তোষ্ট হতে পারেন, যা শিক্ষাঙ্গনে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে।
এই পরিস্থিতি বিবেচনায়, উপজেলা, জেলা, অঞ্চল এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখায় দীর্ঘ ৩১ (একত্রিশ) বছর শিক্ষা প্রশাসনিক কাজে দক্ষ ৬ষ্ঠ গ্রেডভূক্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও ৭ম গ্রেডভূক্ত সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের পদোন্নতি ও পদায়নের জোর দাবী,
মাধ্যমিক শিক্ষার মাঠ প্রশাসনে কাজ করা ১০-২২ বছরের দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত Secondary Education Sector Investment Program (SESIP) এর ১১৮৭ (এক হাজার একশত সাতাশি)টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা ও
শিক্ষা বর্তমানে বহুমাত্রিক সমস্যায় জর্জরিত। মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন-স্কুল, মাদ্রাসা, সরকারি-বেসরকারি, কারিগরি এবং ইংরেজি ভার্সনের মধ্যে বৈষম্য প্রকট। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা যুগোপযোগী করতে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করার দাবি।
স্মারকলিপিতে দ্রুত এসব প্রস্তাবনা মেনে নেয়ার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে ও স্মরকলিপি প্রদানের সময় দিনাজপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার মোঃ মিরাজুল ইসলাম, সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নির্মল কুমার রায়, শিক্ষক কর্মচারি ঐক্যজোট দিনাজপুর সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মদ আজিজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিউর রহমান, মাদরাসা শিক্ষক সমিতি জেলা শাখার আহবায়ক মোঃ মিজানুর রহমান, শিক্ষক নেতা কাজী মোঃ আব্দুর রহিম, মোঃ শহিদুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল মালেক, মোঃ জমশেদ আলীসহ শিক্ষক কর্মচারি ঐক্যজোটের অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।